বিশেষ প্রতিবেদন:মধুমতী নদীর তীব্র ভাঙন হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে। নদীপাড়ের অনেকে বাড়িঘর, ফসলি জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। ভাঙনের তীব্রতা বেশি থাকায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে হাজারো পরিবারের। কয়েক দিনে মধুমতী নদীর ভাঙনে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের শিকারপুর, টিঠা পানাইল, কুমুরতিয়া, ইকড়াইল ও টিঠা গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। নদীভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে আরও প্রায় ৩৫০ পরিবার।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টগরবন্দ ইউনিয়নে গত কয়েক দিন ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে ভাঙন। নদীতে পানি বাড়তে থাকায় ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। শিকারপুর গ্রামের নিজামউদ্দিন, হরেকৃষ্ণ মণ্ডল, আইয়ুব মোল্লা বলেন, যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে তাতে বসতবাড়িতে থাকাই এখন কষ্টকর। নিজামউদ্দিন হারিয়েছেন ভিটেমাটি ও দুই একর ফসলি জমি। আর ৩৮ শতাংশ জমি এবং চারটি ঘর হারিয়েছেন হরেকৃষ্ণ মণ্ডল। সবকিছু হারিয়ে এই পরিবারগুলো এখন নদীতীরবর্তী স্থানে অন্যের জায়গায় ছাপরাঘর তৈরি করে বৃষ্টির মধ্যে নিদারুণ কষ্টের মধ্যে বসবাস করছেন।ইউনিয়নটির শিকারপুর, টিঠা পানাইল, কুমুরতিয়া, ইকড়াইল ও টিঠা গ্রামের কয়েক শ পরিবারে এখন রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাদের সবার চোখমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ, ‘এ বছর যেভাবে নদী ভাঙছে তাতে করে পরিবার নিয়ে পথে বসে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।’স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, মধুমতীর ভাঙন ঠেকাতে সরকারি তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালকের কাছে গত ২৬ মে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনের কোনো সুফল পাননি। ইকড়াইল গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, ‘এবার যেভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে, তা ঠেকাতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদরাসাসহ অনেক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। অর্ধশত মানুষ এরই মধ্যে বসতঘর হারিয়েছেন। শত শত একর আবাদি জমি গেছে নদীতে।’ গ্রামের আরেক বাসিন্দা আবদুস সাত্তার প্রশ্ন রেখে বলেন, আর কত বসতবাড়ি বিলীন হলে সরকারের টনক নড়বে। এরই মধ্যে ইকড়াইল গ্রামের একটি মসজিদ নদীতে হারিয়ে গেছে। ইকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন নদীর মাত্র ২০ গজ দূরে। যে কোনো মুহূর্তে সেটি তলিয়ে যেতে পারে। ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, পাঁচটি গ্রামের ১০টি জামে মসজিদ, একটি কলেজ, দুটি হাইস্কুল, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদরাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি সাব পোস্ট অফিস, দুটি বড় হাট, ১০টি মাছ ও গবাদিপশুর খামার, কয়েকটি কাঁচা সড়ক, ঈদগাহ, কবরস্থানসহ শত শত একর ফসলি জমি, গাছপালাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে তারা আতঙ্কে আছেন। টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হাচান শিপন বলেন, ‘মধুমতীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনও বেড়েছে। এখনই যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এই অবহেলিত এলাকাটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ভাঙনের বিষয় জানিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পাউবো মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। বিষয়টি তারা উপজেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছেন।
Discussion about this post