ঢাকা: ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তাঁরা মনে করেন, ড্যাপকে সমতাভিত্তিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর ভবন হতে হবে পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত। তাঁরা গতকাল রাজধানীর সিরডাপে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্ট্যাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘ড্যাপ নিয়ে জটিলতা : টেকসই নগরায়ণ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এসব মন্তব্য করেন। সংলাপে রাজনৈতিক নেতা, স্থপতি, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনরা অংশ নেন।ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে ২০২২ সালে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) গেজেট আকারে প্রকাশ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর থেকেই এর সংশোধন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তৈরি হয়েছে মতপার্থক্য, যার কারণে আটকে আছে ড্যাপের বাস্তবায়ন। বক্তারা বলেন, ঢাকাকে বাঁচাতে হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) আরো জনবান্ধব ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।সংলাপে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র দেশটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমলা দোষ দেয় রাজনীতিবিদদের, রাজনীতিবিদরা দোষ দেয় আমলাদের। আমাদের দরকার সর্বস্তরে নীতিবান ও সৎ ব্যক্তিত্ব।’জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আইনের কনসিস্টেনসি বা কন্টিনিউটি থাকতে হবে। বারবার ড্যাপ বদলালে আইন আরো কঠিন হয়ে যাবে। পরিকল্পনার সময় সমন্বয় থাকতে হবে। কোনো সিদ্ধান্ত একটি জায়গা থেকে সবাইকে নিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। ২০১২ সালে কেউ রেজিস্ট্রেশন করল; এখন ২০২৫ সালেও কিন্তু তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এই টাকাটা তারা ট্যাক্সের কই দেখাচ্ছে? এ বিষয়ে কমপ্লায়েন্ট থাকতে হবে। বাড়ি বানানোর পর আবার বাড়ি ভাঙা অপচয়। আমাদের প্রথমে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আইন যখন-তখন বদলানো বাদ দিতে হবে।’জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটওয়ারী বলেন, ‘ভূমিকম্প হলে ঢাকা ধ্বংস হয়ে যাবে। ভবনের চাপে বেশির ভাগ মানুষ মারা যাবে। ডিআইটি থেকে রাজউক করা হয়েছে ঢাকার উন্নতির জন্য; কিন্তু হয়নি। ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক। গ্রামগুলোকে উন্নত করতে পারলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। মাঠ যা আছে, পুকুর যা আছে তা সংরক্ষণ করতে হবে।’সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, ‘বাংলাদেশে অনিয়মের কারণে অনেক সম্ভাবনাই বাস্তবে রূপ নেয়নি। বড় ভূমিকম্প হলে চিপা গলির ভেতরের ভবনগুলোর অবস্থা খারাপ হবে। উদ্ধার করা যাবে না কোনো মানুষকে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের এটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ঢাকার ৪১টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নেই। ভূমিকম্প হলে ভবনের কী হবে, তা নিয়ে সরকার চিন্তা করে না।’সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নতি না করতে পারলে ঢাকার জনসংখ্যা আরো বাড়বে। ঢাকার এক কোটি মেহনতি মানুষকে নিয়ে ভাবতে হবে। কেবল উচ্চবিত্তদের নিয়ে ভাবলে হবে না। ড্যাপের উচিত সমতাভিত্তিকভাবে কাজ করা।’আরো বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, দ্য ফিন্যানশিয়াল পোস্ট সম্পাদক এম এ আজিজ, সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন ও প্রতিষ্ঠাতা এম এস শেকিল চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হক, বিডিইএফ সভাপতি সরদার আমিন, রিহ্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফিন্যান্স) আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আহ্বায়ক দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ প্রমুখ। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী। সঞ্চালনা করেন সিজিএসের প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।
Discussion about this post