গত কয়েক দিন ধরেই সিরাজগঞ্জের বিতর্কিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিনোদন বিমুখিতার ইস্যুতে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। এবার প্রশ্ন উঠে এসেছে তার সঙ্গে স্থানীয় ২১ সিটের একটি সিনেপ্লেক্স ‘রুটস’এর মালিকের গভীর সখ্য নিয়ে। আর এ কারণে সিনেমাহল বিহীন সিরাজগঞ্জে পৌর মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে সিনেমা চালানোর অনুমতি না দিতে ‘গোঁয়ারের’ ভূমিকায় নেমেছেন ডিসি মীর মাহবুবুর রহমান। এমনকি প্রদর্শক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিষদ কারো কোনো অনুরোধই তার কাছে পাত্তা পাচ্ছে না। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিনেমাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এক দশকে নিয়েছেন কার্যকরী উদ্যোগ। নীলার সঙ্গে সখ্যর প্রমাণ দিতে ডিসির গোয়ার্তুমি এখন টক অব দ্য সিরাজগঞ্জ।
বিষয়টি স্পষ্ট হয় রুটস সিনেক্লাবের কর্ণধার সামিনা ইসলাম নীলার একটি পোস্টে। সেখানে তিনি লিখেন- ‘অবৈধ সিনেমা প্রদর্শন, অর্থাৎ হল না কিন্তু একটা অডিটরিয়াম ভাড়া করে ৭দিন সিনেমা চালানোর প্রক্রিয়াকে যারা সমর্থন করেন তারা আসলে মেরুদণ্ডহীন মানুষ!
‘আমরা যারা হল চালাই তারা বছরে ৫টা বড় ছবিও পাই না। তারপরও ধৈর্য্য ধরে সিনেমা হল খুলে রাখি। দুই ঈদের সিনেমাকে কেন্দ্র করে নতুন উদ্দ্যম সঞ্চার করি। বছর বছর হলের লাইসেন্স রিনিউ করি, নিয়মিত ভ্যাট দেই। তারপরও হল বন্ধ করি না। ১জন দর্শক হলেও নিজেদের অর্থনৈতিক ক্ষতি করে সিনেমা চালাচ্ছি।
অথচ ঈদ এলে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী অসাধু ব্যবসায়ী তাদের স্বার্থ লাভের আশায় যে কোনো একটা অডিটরিয়াম ভাড়া নিয়ে কোনো প্রকার বৈধ কাগজ ছাড়াই, ভ্যাট না দিয়েই ঈদের সিনেমা চালানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। বাজে রেজুলেশন, বাজে সাউন্ড, ফ্যানের অপ্রতুলতা, মশা মাছির অত্যাচার, বিড়ির গন্ধ, জুয়া, মদ এসব তো বাদই দিলাম।’
‘প্রশাসন যখন এই অনিয়ম বন্ধে তৎপর হয় তখন ঐ অসাধু ব্যবসায়ীর মতো মানুষগুলো প্রশাসনকে সাংস্কৃতি চর্চার অন্তরায় বলে উল্ল্যেখ করে প্রচার করতে শুরু করে। সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে এক ধরণের বিষ ঢালতে শুরু করে।’
অথচ সিনেমা সেন্সর পাওয়ার আগে মহাজনী ভূমিকায় নেমে নিজের মতো করে দাম বেধে প্রশাসনের নাকের ডগায় অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছেন এই নীলা। এ ব্যাপারে একাধিক পত্রিকায় সংবাদও হয়েছে। এ বিষয় জেনেশুনেও জেলা প্রশাসক নিরব ভূমিকা পালন করেছেন। পরে সাংবাদিকরা তার কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানাবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর এতে করেই গুজব ভারী হতে চলেছে মাত্র একুশ সিটের একটি সিনেক্লাবের মালিকের সঙ্গে কতটুকু গভীর সখ্য থাকলে ডিসি পুরো সিরাজগঞ্জবাসীকে সিনেমার বিনোদন থেকে বঞ্চিত করার সাহস দেখাতে পারেন। কথায় বলে গভীর সম্পর্কের জেরে নীলার কথার বাইরে যেতে পারছেন না ডিসি মহোদয়। আর এতে করে ঈদে সিনেমা বঞ্চিত থাকবে বৃহৎ সিরাজগঞ্জবাসী। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর সাংস্কৃতির প্রতি উদার মনোভাবও উপেক্ষিত হচ্ছে এই জুটির কারণে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। এতে করে স্থানীয়রা বিনোদনের মতো মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত থাকছে। অন্যদিকে মৌলবাদী চিন্তার প্রকাশ বাড়ছে, যার পৃষ্টপোষকতা করছেন সংস্কৃতিবিমুখ এই ডিসি।
তাদের অভিমত, সাংস্কৃতিকবিমুখ জাতি ধর্মীয় গোঁড়ামী নিয়ে সমাজকে নেতিবাচক ম্যাসেজ দেয়। আমাদের সিরাজগঞ্জের বিপুল সংখ্যক যুব সমাজের জন্য যেখানে বিনোদনের প্রয়োজন সেখানে রুটস সিনেক্লাব তার নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করতে ডিসিকে হাত করে নিয়েছেন। এরফলে সিরাজগঞ্জে সাংস্কৃতির বিকাশে ডিসি কোনো কার্যকর ভূমিকাই রাখতে পারছেন না বিশেষ এই ‘সখ্যে’র কারণে।
তবে বিশেষ সখ্য ঠিক কোন পর্যায়ের তা স্থানীয়দের মাঝে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে এটা কেবল পেশাদারিত্বের। কেউবা বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখলেও প্রতিবেদকের হাতে এ নিয়ে কোনো প্রমাণ এসে পৌঁছায়নি।
প্রসঙ্গত, ঘুষ নিয়ে ভেন্যু পরিবর্তন করে গোপন পরীক্ষার মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার গোন্তা আলিম মাদরাসায় চার প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে জেলা প্রশাসক মীর মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Discussion about this post