স্টাফ রিপোর্টার: সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ও বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় ১ জুন থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত টানা তিন মাসের জন্য বন্ধ হলো সুন্দরবন। এ সময় পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকছে। জুন থেকে থেকে আগস্ট, এই তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই সময়ে সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এছাড়া এই সময়ে বন্য প্রাণীদেরও প্রজনন মৌসুম। সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছরের ০১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ থাকতো। পরে ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিষেধাজ্ঞা এক মাস বাড়িয়ে ০১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, এই সময়ে জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের পাসও বন্ধ থাকবে। কোনোভাবে অবাঞ্ছিত কেউ বনে প্রবেশ করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞার সময়ে বনে যেন কোনো প্রকার অন্যায়-অপরাধ সংঘটিত হতে না পরে সে জন্য বন বিভাগ সদা সতর্ক অবস্থানে থাকবে। বন বিভাগের মতে, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বিভিন্ন নাম ও আকারের ৩৪৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরী এবং গেওয়া গাছের আধিক্য বেশি। এছাড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বানর, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি, ২৯০ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৩৫টি সরিসৃপ ও আট প্রজাতির উভচর প্রাণি রয়েছে। এরমধ্যে দুই প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরিসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং পাঁচ প্রজাতির স্তন্যপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। এদিকে, তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষ। এসময় তাদের কোনো রোজগারের পথ বন্ধ থাকবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে জেলে-বাওয়ালীরা। মৎস্যজীবী আছাদুল মোল্লা বলেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই আমাদের সংসার চলে। তিন মাস পাস বন্ধ থাকবে। মাত্র কদিন হলো ঝড়ের সংকেত শুনে বন থেকে বাড়িতে ফিরেছি। খুব বেশি মাছ ধরতে পারিনি। সামনের তিন মাস বন্ধের সময় সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকা নেই। কিভাবে সংসারের খরচ মিটাবো এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
Discussion about this post