ঢাকা: ছুটিতে বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফেরার কথা ছিল ফায়ার ফাইটার সোহানুর জামান নয়নের। তিনি ফিরলেন ঠিকই, তবে কফিনবন্দি হয়ে নিথর দেহে। সচিবালয়ের অগ্নি নির্বাপণের কাজে নিয়োজিত নয়ন কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত হন। এরপর ঢাকায় জানাজা শেষে রাত ৯টা ৩৬ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার লাশ নেওয়া হয় রংপুরের মিঠাপুকুরে গ্রামের বাড়িতে। রাত সাড়ে দশটার দিকে বাড়ির পাশের একটি মাঠে অনুষ্ঠিত হয় নয়নের আরেকটি জানাজা। এরপর বাড়ি থেকে একটু দূরে পারিবারিক কবরস্থানে জেঠাইমার (বড় আম্মা) কবরের পাশে দাফন করা হয় আগুনযোদ্ধা নয়নকে। এর আগে, নয়নের লাশ দেখতে অ্যাম্বুলেন্সের পিছু ছুটে আসেন হাজারো মানুষ। লাশ তার বাড়িতে পৌঁছানোর পর সেখানে তৈরি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির। একমাত্র ছেলে সন্তান বিয়োগের ব্যথা সইতে না পেরে নিজের বুক চাপড়ে কাঁদতে থাকেন মা নার্গিস বেগম ও বাবা আখতারুজ্জামান। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মরদেহ নামানোর পর তাকে একনজর দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। পরে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত হন সোয়ানুর জামান নয়ন। তার গ্রামের বাড়ি মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপুনিয়া গ্রামে। তিনি কৃষক আখতারুজ্জামানের ছেলে। ছোটবেলা থেকে পুলিশ বা কোনো বাহিনীতে কাজ করার স্বপ্ন ছিল। ২০২২ সালে সেই স্বপ্ন পূরণে যোগদান করেন ফায়ার সার্ভিসে। নয়ন ২০১৬ সালে ছড়ান দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৮ সালে ছড়ান ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ওই কলেজেই ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হন। এরপর ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন। নয়নের মূল কর্মস্থল ছিল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশনে। দক্ষ ও সাহসী ফায়ার ফাইটার হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে সবার কাছে পরিচিত হওয়ায় সেখান থেকে তাকে ঢাকার তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়েছিল।
Discussion about this post