ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ আজ রাতেই ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার মধ্যবর্তী উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পরিচালিত ‘জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার’ (জেটিডব্লিউসি) এই ঘূর্ণিঝড়টির অস্তিত্ব নিশ্চিত করেছে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকালে সংস্থাটির সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় শক্তি বর্তমানে ভারতের অন্ধ্র উপকূলের পূর্ব দিকে এবং কলকাতা শহর থেকে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের কাছে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার এবং দমকা হাওয়ার গতি ঘণ্টায় প্রায় ৮৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছে। যদিও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর (আইএমডি) এখনো এটিকে ‘গভীর নিম্নচাপ’ হিসেবেই চিহ্নিত করছে, তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়েছে এবং দ্রুতই স্থলভাগে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।ঘূর্ণিঝড় শক্তি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে না। তবে এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। একইসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যেও বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।বর্ষা মৌসুম এখনো শেষ হয়নি। সাধারণত এই সময়ে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার মতো অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করে না। কিন্তু এবার সেই ব্যতিক্রম ঘটেছে। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে আগের যেকোনো বছরের তুলনায় রেকর্ড সংখ্যক মৌসুমি লঘুচাপ, নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই তৈরি হলো ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’।অন্যদিকে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি গভীর নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে সমুদ্র উত্তাল করে তুলেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭৫ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৮৩০ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ৭৩৫ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।এই গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরে এখন দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার এবং দমকা হাওয়ার বেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের ভাষ্য, সমুদ্র বর্তমানে খুবই উত্তাল এবং পরিস্থিতি যেকোনো সময় দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে। তাই কেউ যেন গভীর সমুদ্রে না যান, সে বিষয়ে কড়া সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় শক্তির গতিপথ, গতি ও অবস্থান সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। নতুন কোনো তথ্য থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।
Discussion about this post