ঢাকা: দেশের সেবাখাতের মধ্যে ২০২১ সালে মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেবা নিতে গিয়ে। আর ঘুষ নেয়ার দিক থেকে পাসপোর্ট রয়েছে শীর্ষে। দেশের সেবা খাত নিয়ে এক জরিপের সার্বিক পর্যবেক্ষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ—টিআইবির প্রতিবেদনে। বুধবার ঢাকার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয় বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। দুর্নীতি ও ঘুষের ওপর ভিত্তি করে সেবা খাতের ৯টি খানার ওপর এই জরিপ করা হয়। টিআইবির গবেষক ফারহানা রহমান সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন। টিআইবি বলছে, ২০২১ সালে সেবাখাতগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দুর্নীতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে পুলিশ, র্যাব, আনসারের মতো বাহিনীগুলোকে বোঝানো হয়েছে। আর সম্মিলিতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ অপর দুটি খাত হলো আইন পাসপোর্ট ও বিআরটিএ। টিআইবি জানিয়েছে, ২০২১ সালের জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশের ৭০.৯ শতাংশ ‘খানা’ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাত বা প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতে গিয়ে কোনো না কোনো খাতে দুর্নীতির শিকার হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ৭৪.৪ শতাংশ সর্বাধিক দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এরপরেই রয়েছে পাসপোর্ট ৭০.৫ শতাংশ, বিআরটিএ ৬৮.৩ শতাংশ, বিচারিক সেবা ৫৬.৮ শতাংশ, সরকারি স্বাস্থ্য সেবা ৪৮.৭ শতাংশ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ৪৬.৬ শতাংশ এবং ভূমি সেবা ৪৬.৩ শতাংশ। একই বাসস্থানে বসবাস করে, একই রান্নায় খাওয়া-দাওয়া করে এবং তাদের মধ্যে একজন খানাপ্রধান হিসেবে স্বীকৃত এমন পরিবারকে টিআইবি ‘খানা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। টিআইবির সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সেবাখাতে দুর্নীতির শিকার খানার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৬৬.৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৭০.৮ শতাংশ। তবে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ঘুষের শিকার খানার হার হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ২০১৭ সালে ছিল ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ সেটা ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ১ শতাংশ। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সেবা খাতে দুর্নীতিতে কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও সার্বিক তথ্য উদ্বেগজনক। বিচারিক খাতের দুর্নীতিও উদ্বেগজনক। যারা অনিয়ম করছেন, তারা ঘুষকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছেন। যারা দিচ্ছেন তারা জীবনযাপনের অংশ করে নিয়েছেন।
Discussion about this post