আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদিকে গ্রেপ্তারের সময় মারধর করা হয়েছে এবং পরে দুবার হাসপাতালে নিতে হয়েছে বলে দাবি করেছে তার পরিবার।রোববার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এক ফোনালাপে ৫৩ বছর বয়সী নার্গিস মোহাম্মদি জানান, তাকে গ্রেপ্তারের সময় সাদাপোশাকে থাকা নিরাপত্তা সদস্যরা মাথা ও ঘাড়ে বারবার এবং গুরুতর লাঠির আঘাত করে। এ কারণে তাকে দুবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে নার্গিস ফাউন্ডেশন।তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ। তবে তারা জানিয়েছে, শুক্রবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে এক স্মরণসভায় ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।নার্গিস ফাউন্ডেশনের বরাতে পরিবার জানায়, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, স্মরণসভায় প্রায় ১৫ জন সাদাপোশাকধারী সদস্য তাকে ঘিরে ধরে মারধর করে। কেউ কেউ তার চুল টানেন এবং লাঠি ও ক্লাব দিয়ে আঘাত করেন।রোববার সন্ধ্যায় পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় নার্গিস মোহাম্মদি বলেন, আঘাতের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে তাকে দুবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে হয়। তিনি আরও জানান, বর্তমানে কোন নিরাপত্তা সংস্থার হেফাজতে আছেন তা পর্যন্ত তাকে জানানো হয়নি এবং এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি।নার্গিস ফাউন্ডেশনের বিবৃতিতে বলা হয়, তাকে ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা সদস্যরা তাকে বলেন, ‘আমরা তোমার মাকে শোকাহত করব।’এ ঘটনায় একই স্মরণসভা থেকে আটক হওয়া দুই মানবাধিকারকর্মী সেপিদেহ ঘোলিয়ান ও পুরান নাজেমিকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।মাশহাদের প্রসিকিউটর হাসান হেমাতিফার শনিবার জানান, ওই ঘটনায় মোট ৩৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁর দাবি, নার্গিস মোহাম্মদি ও খসরু আলিকর্দির ভাই জাভাদ উপস্থিত লোকজনকে ‘নিয়মবহির্ভূত স্লোগান’ দিতে এবং ‘শান্তি বিঘ্নিত’ করতে উসকানি দেন।নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শুক্রবার এক বিবৃতিতে নার্গিস মোহাম্মদির ‘নৃশংস গ্রেপ্তার’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইরানি কর্তৃপক্ষকে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।ইরানের ডিফেন্ডার্স অব হিউম্যান রাইটস সেন্টারের ভাইস প্রেসিডেন্ট নার্গিস মোহাম্মদি ২০২৩ সালে ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তিনি জীবনের ১০ বছরের বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।২০২১ সাল থেকে তিনি রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৩ বছরের সাজা ভোগ করছেন, যা তিনি বরাবরই অস্বীকার করেছেন। চিকিৎসাজনিত কারণে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়।চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও তিনি মানবাধিকার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার মাশহাদে মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী খসরু আলিকর্দির স্মরণসভায় তিনি বক্তব্য দেন। চলতি মাসের শুরুতে আলিকর্দিকে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, যা মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘সন্দেহজনক’ বলে উল্লেখ করেছে।
























































Discussion about this post