ঢাকা:গোপালগঞ্জে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানায় নতুন করে ৪টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা নিয়ে মোট মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮টি। এই ৮টি মামলায় মোট ৮ হাজার ৪০৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।গোপালগঞ্জে আজ রোববার (২০ জুলাই) নতুন করে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সদর থানা পুলিশ ৯ জন, কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ৮ জন, মুকসুদপুর থানা পুলিশ ৪ জন এবং কাশিয়ানী থানা পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ নিয়ে এই ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১০ জনে।এদিকে, শনিবার রাত ৮টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত জেলায় জারি থাকা কারফিউ শেষ হয়েছে। এর পরপরই রোববার সকাল ৬টা থেকে জেলাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস-আদালত এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকলেও সভা-সমাবেশ এবং একসঙ্গে একাধিক মানুষের চলাচল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।সকালে সীমিত আকারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছে এবং যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসেছে এবং অফিস-আদালত খুলেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছে। তবে জনমনে গ্রেপ্তার আতঙ্ক এখনো বিদ্যমান।জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার গোপালগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হন। পরে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আরও একজনের মৃত্যু হলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫ জনে দাঁড়ায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন কারফিউ জারি করে, যা মাঝে মাঝে শিথিল করে চলমান রাখা হয়েছিল। এই ঘটনায় পুলিশ তিন হাজার ৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে আসামি করে পৃথক চারটি মামলা করেছে।গত ১৬ জুলাই এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার রেশ এখনো জেলাজুড়ে বিদ্যমান। সকালে কারফিউ শেষ হলেও আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে সারা জেলায় সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। যদিও শিক্ষার্থী, পরীক্ষার্থী ও জরুরি সেবাসমূহ এর আওতামুক্ত ছিল, তবে সভা, সমাবেশ ও জনসভা নিষিদ্ধ ছিল। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত জেলা হলেও হরতালের কোনো প্রভাব পড়েনি গোপালগঞ্জে। হরতালের সমর্থনে কোথাও কোনো পিকেটিং বা মিছিলের খবর পাওয়া যায়নি। তবে শহরের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ থাকায় ও সাধারণ মানুষ বাইরে বের না হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন এবং দ্রুত এই অবস্থার উত্তরণ চাইছেন।জেলায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও সময়মতো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বাস চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় পরীক্ষা কেন্দ্রে আসতে শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। ফলে গ্রেপ্তার আতংকে রয়েছে সাধারণ মানুষ। দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করার পাশাপাশি নিরাপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
Discussion about this post