ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী নিষ্ঠুর সরকার গত এক যুগের বেশি সময় ধরে শুধুমাত্র তাদের অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে গোটা দেশে ভয়ঙ্কর এক নারকীয় পরিবেশ তৈরি করেছে। চরম দুঃশাসক,অরাজক ও ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী এই সরকার গুম-খুন ও ক্রসফায়ারের সরকারে রূপান্তরিত হয়েছে।’ রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপির এই মুখপাত্র। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জনগণের ঘামঝরানো টাকায় পরিচালিত পুলিশ-র্যাবসহ গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো অন্যায়ভাবে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর লেলিয়ে দিয়ে জনসমাজে সৃষ্টি করেছে আতঙ্কের এক ভীতিকর পরিবেশ।’ এ সরকার রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী ও বিপজ্জনক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘মিথ্যার পূজারী আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা বলে যে, এখানে গুম হয় না। গুম বলে কোনো শব্দ নেই। তাহলে এতগুলো মানুষ গেল কোথায়? সুইডেন ভিত্তিক নিউজপোর্টাল নেত্র নিউজের অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন ‘আয়নাঘর’ নারকীয় এক গোপন সরকারি গুমকেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে, যেখানে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গুমের শিকার বন্দীদের আটক রেখে নির্যাতন করা হয়।’ এই আয়নাঘর পৃথিবীর কুখ্যাত কারাগারের মতো ভয়াবহ বলে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘এই সরকারের অবসানের পরে এগুলো সব উন্মোচিত হবে, বিচারও হবে। এবং এই যুগটি ইতিহাসে গুমের যুগ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। নিপীড়ক এ সরকার আয়নাঘর তৈরি করে ক্ষমতার ময়ুর সিংহাসনে বসে আছেন। সরকার প্রধান প্রায় তার পিতা-মাতা ভাইদের হত্যাকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে অশ্রু বিসর্জন দেন। তখন কি তার একবারও মনে হয় না যে, তার ডেথ স্কোয়াড প্রতিনিয়ত গুম-খুন করছে যাদের, তাদের পরিবারের কি অবস্থা! তারাও তো কেউ পিতা হারাচ্ছেন, কেউ স্বামী, ভাই বা স্বজন হারাচ্ছেন। গুম হওয়া পিতাকে ফিরে পেতে আর্তনাদ করছে সন্তানরা। আর না হয় তারা তাদের বাবার লাশটা ছুঁয়ে দেখতে চায়।’ গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এদেশের সাবেক র্যাব প্রধানসহ সাত জন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘ফলে বেশ কিছুদিন ক্রসফায়ার বন্ধ রয়েছে। তবে গুম থেমে নেই, যা দেশের নাগরিক বিশেষ করে ভিন্নমতের মানুষের জন্য আতঙ্কজনক। সারাদেশে আয়নাঘর নিয়ে তোলপাড় চললেও বন্ধ করা হচ্ছে না বাংলাদেশি গ্যাস চেম্বার গুমঘর।’ বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতির এমনভাবে প্রকাশ্যে হাটে হাড়ি ভাঙার পর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব এই সত্য ঢাকার জন্য মিথ্যাচার করলেও শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন তার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা নাকচ করে দিয়ে আবারো বলেছেন, আমি ভুল কিছু বলিনি। আমি জেনেশুনে বুঝে দায়িত্ব নিয়েই বলেছি। কারণ তাকে এটা নিয়ে তদবিরের দায়িত্ব শেখ হাসিনা দিয়েছেন।’ ‘প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে ভারত যাচ্ছেন ক্ষমতায় থাকার ধরনা দিতে’ মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আব্দুল মোমেন তার পটভূমি রচনা করে এসেছেন। এখন আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন সে আওয়ামী লীগের কেউ না। কিন্তু তিনি সিলেট মহানগর থেকে এমপি হয়েছেন কোন দলের টিকিটে? ওবায়দুল কাদের অনুমোদিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য কে? কিন্তু দেশবাসীসহ আমরা সকলেই জানি তিনি এ কে আব্দুল মোমেন।’ ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে দেননি। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদটি ব্যবহার করেই বক্তব্য দিয়েছেন’ বলেও মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র নেতা। রিজভী বলেন, ‘একটা বিষয় স্পষ্ট যে সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ করছে। বিগত নির্বাচনের আগেও ভারতের বহুল প্রচারিত আউটলুক সাময়িকীতে শিরোনাম ছিল ‘হাসিনাকে আরেকবার ক্ষমতায় আনার কৌশল চূড়ান্ত করছে ভারত সরকার।’ তিনি আরও বলেন, একটা রাষ্ট্র কতটা অপদার্থ অক্ষম ও জনবিচ্ছিন্ন হলে অন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়। এরাই বিদেশিদের পদলেহন করে ক্ষমতায় আছে আবার এরাই গলাবাজি করে বলে, ক্ষমতার জন্য অন্যরা বিদেশিদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে।’ ‘এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকাকে বলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে, ভারতকে বলে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে- এটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ। অথচ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধগতিতে মানুষ যখন দিশেহারা, খাবারের অভাবে সন্তানকে বিক্রি করতে বাজারে তুলছে মা, কন্যার স্কুলের বেতন জোগার করতে না পেরে আত্মহত্যা করছে বাবা, লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, আর্থিক সংকটে বিদেশের ঋণ পেতে সবার দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন অর্থমন্ত্রী, ঠিক সে সময়ে এইতো কয়দিন আগে এই মোমেন সাহেব বলেছিলেন, দেশের মানুষ তুলনামূলক বেহেশতে আছে। জনগণের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার তদবির নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’ বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ভারতের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতায় টিকে থাকার এ হীন আকুতি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ববিরোধী চক্রান্তে জড়িত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। অন্য কোনো রাষ্ট্রের অঙ্গ বা কারও মক্কেলরাষ্ট্র নয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতায় থাকা বা না থাকা নির্ভর করে দেশের জনগণের অভিপ্রায়ের ওপর। অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভিপ্রায়ে নয়।’
Discussion about this post