আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দুই বছরের ইসরায়েলি গণহত্যামূলক যুদ্ধের পর গাজা পুনর্গঠনে প্রয়োজন অন্তত ৭০ বিলিয়ন ডলার লাগবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। এছাড়া যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সম্পূর্ণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগতে পারে একাধিক দশক বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) এবং বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাজা পুনর্গঠনে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এই হিসাব প্রকাশ করা হয়। এই হিসাব গত ফেব্রুয়ারির ৫৩ বিলিয়ন ডলারের অনুমান থেকে অনেক বেশি।সম্প্রতি গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলি বোমা হামলা বন্ধ হয়েছে। এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত। চিকিৎসা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামো চূর্ণবিচূর্ণ, কৃষিজমি ধ্বংস এবং খাদ্যসংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বিশেষ প্রতিনিধি জ্যাকো সিলার্স জানান, ‘গাজা জুড়ে আনুমানিক ৫৫ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এই পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কজুড়ে ৪০ ফুট উচ্চতায় স্তূপ করা সম্ভব বা মিশরের গিজায় ১৩টি বৃহৎ পিরামিড তৈরির জন্য যথেষ্ট।’তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। বাকি অর্থ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন হবে। এটি কয়েক দশক জুড়ে চলতে পারে।জাতিসংঘের স্যাটেলাইট সেন্টার (ইউএনওএসএটি) অনুযায়ী, শুধুমাত্র গাজা শহরে প্রায় ৮৩ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ইউএনডিপি এখন পর্যন্ত গাজা থেকে ৮১ হাজার টন ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করেছে বলে জানিয়েছে।জ্যাকো সিলার্স আরও জানান, আরব বিশ্ব, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দাতাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। যদিও নির্দিষ্ট করে কোনো নাম উল্লেখ করেননি।অন্যদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপসাগরীয় দেশ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন চাইবেন তিনি।মিশরের শারম এল-শেখ থেকে ফেরার পথে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তার সরকার মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন নিয়ে কাজ করছে, পাশাপাশি গাজায় কনটেইনার ঘর পাঠানোর বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে।এরদোয়ান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং আরব লীগের উদ্যোগে গড়ে ওঠা পুনর্গঠন প্রকল্পগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা দ্রুত আসবে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উপসাগরীয় দেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছ থেকে সহায়তা চাইছি। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া আশাব্যঞ্জক।’তুরস্ক ইসরায়েলের গাজা আক্রমণকে ‘গণহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছে। এছাড়া যুদ্ধবিরতি কার্যকরে আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছে।
Discussion about this post