আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সদ্য প্রয়াত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করতে অসম্মতি জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেইসঙ্গে তার শেষকৃত্যে পুতিন নিজেও উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে তাকে সামরিক সম্মান ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হবে। খবর রয়টার্সের। রাশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক কমিউনিস্ট সদস্য বরিস ইয়েলতসিনের শেষকৃত্যে রাষ্ট্রীয় পূর্ণ সম্মান দেওয়া হয়েছিল। মিখাইল গর্বাচেভের শেষকৃত্যে সেটা দেওয়া হবে না। কেননা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন রোধে তাকে একজন ব্যর্থ নেতা হিসেবে মনে করেন পুতিন। শনিবার মস্কোর হল অব কলামে জনসাধারণের এক অনুষ্ঠানের পরে তাকে সমাহিত করা হবে৷ ক্রেমলিনের দৃষ্টিতে সোভিয়েত নেতা ভ্লাদিমির লেনিন, জোসেফ স্ট্যালিন এবং লিওনিড ব্রেজনেভের শেষকৃত্যের আয়োজন করেছিল গ্র্যান্ড হল। তবে গর্বাচেভকে শুধু সামরিক গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। মঙ্গলবার মস্কোর সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯১ বছর বয়সী গার্বাচেভ। রাশিয়ার ঐতিহ্য অনুযায়ী কফিনে তার লাশ রেখে ঢাকনা খোলা রাখা হয়েছিল বিদায় জানানোর উদ্দেশে। বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারে দেখা গেছে গর্বাচেভের কফিনের পাশে গম্ভীরভাবে লাল গোলাপ রাখছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। শেষকৃত্যে পুতিনের যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, রাষ্ট্রপতির কাজের সময়সূচীর জন্য ৩ সেপ্টেম্বর তিনি যোগ দিতে পারবেন না। তাই আজ (বৃহস্পতিবার) তিনি এটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেছিলেন, গর্বাচেভের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ‘উপাদান’ থাকবে এবং রাষ্ট্র এটি সংগঠিত করতে সহায়তা করছে। গর্বাচেভের শেষকৃত্যানুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং পরে তাকে নভোদেভিশি সিমেট্রিতে সমাহিত করা হবে, গর্বাচেভ ফাউন্ডেশনের প্রেস সেক্রেটারি ভ্লাদিমির পলিয়াকভের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা তাস এ কথা জানিয়েছে। নভোদেভিশি সিমেট্রিতেই গর্বাচেভের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও রাশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন এবং গর্বাচেভের স্ত্রী রাইসাকে সমাহিত করা হয়েছে। রাইসা ১৯৯৯ সালে মারা যান। ২০০৭ সালে ইয়েলৎসিনের মৃত্যুর পর তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছিল। তখন ভ্লাদিমির পুতিন তার পূর্বসূরীর মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে মস্কোর ক্যাথেড্রাল অব ক্রাইস্ট দ্য সেভিয়ারে একটি বিশাল রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও যোগদান করেন তিনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ অন্ততপক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে উল্টানোর লক্ষ্যে প্রদর্শিত হয় যা গর্বাচেভ ১৯৯১ সালে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। যুদ্ধোত্তর সোভিয়েত কমিউনিস্ট ব্লকের দেশগুলিকে তাদের নিজস্ব পথে চলতে দেওয়ার এবং পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে পুনরায় একত্রিত হওয়ার জন্য গর্বাচেভের সিদ্ধান্ত ১৫টি সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মধ্যে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে ট্রিগার করতে সাহায্য করেছিল। সেগুলি দমন করার সক্ষমতা তার ছিলনা। ২০০০ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পাঁচ বছর পর, পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়াকে ‘২০ শতকের সবচেয়ে বড় ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন। গর্বাচেভের মৃত্যুর পরে পুতিনের ১৫ ঘন্টারও বেশি সময় লেগেছিল একটি সংযত শোক বার্তা প্রকাশ করতে। বার্তায় বলা হয়েছিল, ১৯৮০ সালে গর্বাচেভ ‘বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথে বিশাল প্রভাব ফেলেছিলেন’ এবং ‘গভীরভাবে বুঝতে পেরেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য সংস্কারগুলি প্রয়োজনীয়’। গর্বাচেভের ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পূর্ব ঘোষিত সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত হবে না, বরং শুরু হবে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায়।
Discussion about this post