আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ক্ষুধা মেটাতে গিয়েই জীবন দিতে হলো শত শত ফিলিস্তিনিকে। গাজায় বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য ভিড় জমিয়েছিলেন হাজারো মানুষ। কিন্তু সেই মানবিক সহায়তা কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৭০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি—এমনটাই জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। এই ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত একটি বিতর্কিত সাহায্য প্রকল্পের বিরুদ্ধে নতুন করে নিন্দা জোরদার হয়েছে।শনিবার (৫ জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সাহায্য নিতে গিয়ে কমপক্ষে ৭৪৩ জন নিহত এবং ৪,৮৯১ জনের বেশি আহত হয়েছেন।গত মে মাসের শেষে গাজায় কার্যক্রম শুরু করা জিএইচএফ ইতিমধ্যেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে, কারণ একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের ঠিকাদাররা এবং ইসরায়েলি বাহিনী সাহায্য প্রার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে।আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ মন্ত্রণালয়ের এই তথ্য সম্পর্কে বলেন, ‘এই সংখ্যাটিও আসলে রক্ষণশীল। বাস্তবে বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্যের প্যাকেটের জন্য অপেক্ষারত মানুষের হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।’গাজা সিটি থেকে রিপোর্টিং করতে গিয়ে মাহমুদ বলেন, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছেছে, এবং পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে সাহায্য নিতে আসছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্ষুধার্ত। তারা যা পায় তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। অনেক পরিবার একেবারেই খেতে পারছে না। মায়েরা তাদের সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য নিজেরা খাওয়া বাদ দিচ্ছেন।’গত সপ্তাহে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর একটি প্রতিবেদনে আমেরিকান ঠিকাদারদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সাহায্য নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলি এবং স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে।দুই অজ্ঞাতনামা মার্কিন ঠিকাদার এপিকে বলেছেন, সশস্ত্র কর্মীরা ইচ্ছামতো গুলি চালাচ্ছে। তবে জিএইচএফ এই প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে তারা তাদের কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ‘অত্যন্ত সতর্ক’।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও জিএইচএফ-এর পক্ষ নিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, এই সংস্থাই ‘একমাত্র সত্তা যারা গাজায় খাদ্য ও সাহায্য পৌঁছে দিতে পেরেছে’। জুনের শেষে ট্রাম্প প্রশাসন সংস্থাটিকে ৩০ মিলিয়ন ডলার সরাসরি তহবিল দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।জিএইচএফ জানায়, খান ইউনিসের একটি বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্য বিতরণ শেষে গ্রেনেড হামলায় দুই মার্কিন কর্মী আহত হয়েছেন। সংস্থাটি বলেছে, ‘আহত মার্কিন নাগরিকদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। তবে হামলার জন্য কে দায়ী তা এখনও স্পষ্ট নয়।’প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংগঠনগুলো জিএইচএফের তাত্ক্ষণিক বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই সংস্থা ‘২০ লক্ষ মানুষকে অতিরিক্ত ভিড় ও সশস্ত্র এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন গুলি ও ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটছে’। উল্লেখ্য, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই প্রকল্পকে ‘অমানবিক ও প্রাণঘাতী সশস্ত্র পরিকল্পনা’ বলে বর্ণনা করেছে।
Discussion about this post