ঢাকা: কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নিয়ে এবারও দেখা দিয়েছে হতাশা। সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে গরু ও ছাগলের চামড়া। এতে করে লোকসানে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৬ মে কোরবানির পশুর লবণযুক্ত চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করে। ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০-৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারিত হয়, যা গত বছরের তুলনায় ৫ টাকা বেশি। ছাগলের চামড়ার দাম বেঁধে দেওয়া হয় ২০-২২ টাকা এবং খাসির চামড়ার জন্য ২২-২৭ টাকা। তবে বাস্তবচিত্র ভিন্ন। ব্যবসায়ীদের দাবি, চামড়া বিক্রি হচ্ছে আগের বছরের মতোই ৫৫-৬০ টাকায়, কোথাও কোথাও আরও কম দামে। অনেকে অভিযোগ করছেন, বাজারে নির্ধারিত দামের কোনো প্রতিফলন নেই। ট্যানারি মালিক ও সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, সরকারের নির্ধারিত দাম মূলত লবণযুক্ত চামড়ার জন্য, অথচ মাঠ পর্যায়ে অধিকাংশ চামড়া বিক্রি হচ্ছে কাঁচা অবস্থায়। তারা জানান, ভালো মানের গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও অনেক ক্ষেত্রেই দাম পড়ে ৭০০-৯০০ টাকায়। পুরান ঢাকার পোস্তা, মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাব ও হাজারীবাগের চামড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর কাঁচা চামড়া কিনে আড়তদাররা ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি করছেন ট্যানারিগুলোতে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কুরবানিদাতাদের থেকে ৭৫০ টাকায় চামড়া কিনে তারা লোকসানে পড়েছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চামড়ার দাম উঠেছে মাত্র ৫০০ টাকাও। ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাতে লবণ ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে একেকটির পেছনে ৩৫০-৪০০ টাকা খরচ পড়ে, ফলে কম দামে কিনলে লোকসান অনিবার্য। ছাগলের চামড়ার অবস্থাও ভালো নয়। অনেক জায়গায় দাম উঠেছে মাত্র ১৫-৩০ টাকা, কোথাও আবার চামড়া বিনামূল্যে দিয়ে দিচ্ছেন কুরবানিদাতারা। কেউ কেউ মাংস ছাড়িয়ে চামড়া ফেলে দিচ্ছেন সড়কের পাশে। চামড়া ব্যবসায়ীদের মতে, মূল সমস্যা চামড়াশিল্প নগরের পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অভাব। ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে এই প্রকল্প নেওয়া হলেও এখনো কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (CETP) পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। ফলে ধলেশ্বরী নদী দূষিত হচ্ছে এবং ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা সরাসরি চামড়া কিনছেন না। বর্তমানে বড় বাজার চীন হলেও তারা কম দামে চামড়া নেয়। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির চামড়ার দাম ছিল সবচেয়ে বেশি—প্রতি বর্গফুট ৮৫-৯০ টাকা। এরপর থেকেই দাম পড়ে যেতে থাকে। ২০১৯ সালে বড় ধস নামে, যখন অনেক জায়গায় চামড়া রাস্তায় ফেলে দেওয়া বা মাটিতে পুঁতে ফেলার মতো ঘটনা ঘটে। তাতে ক্ষতি হয় প্রায় ২৪২ কোটি টাকার চামড়ার।
Discussion about this post