ঢাকা:অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা অন্যায্য কোটার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, দেশ হয়েছিল নজিরবিহীন দমন-পীড়নের সাক্ষী। কিন্তু এবার সেই কোটা পুনঃপ্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই বিপ্লবে নিহতদের পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এছাড়া, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পাশাপাশি অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারের জন্য মোট আসনের ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।বিষয়টি নিয়ে অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, যে কোটার বিরুদ্ধে এত ত্যাগ স্বীকার হলো, স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটল, সেই কোটা কেন আবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে? তারা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিশ্চিত করেছেন, সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবারের সক্ষম সদস্যদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য তিনটি ক্যাটাগরিতে (এ, বি ও সি) ভাগ করে বিভিন্ন সরকারি সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আহতরা পরিচয়পত্রের মাধ্যমে এসব সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। অতি গুরুতর আহতদের আজীবন চিকিৎসা সুবিধা, মাসিক ভাতা ও কর্মসহায়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে দেশি-বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগও পাবেন তারা।এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫% কোটা সংরক্ষিত থাকবে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহিউদ্দিন রনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, “কোটা পুনর্বহালের জন্য আমরা আন্দোলন করিনি, আমাদের শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে না। শহীদ ও আহতদের মর্যাদা দিন, কিন্তু চাকরিতে কোটা নয়।”এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন—মেধার ভিত্তিতে নিয়োগই হওয়া উচিত, কোটা নয়।গত ফেব্রুয়ারিতেও জুলাই বিপ্লবের আহত নিহতদের কোটা নিয়ে বিতর্ক হয়। তখন সরকারের তৎকালীন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই শহীদ পরিবারদের এককালীন টাকার পাশাপাশি মাসিক ভাতা ও চাকরির কথা বলা হয়েছে। চাকরিতে এটা কোনো নতুন কোটা হিসেবে যুক্ত হবে না। পরিবারের কর্মক্ষম কোনো একজন ব্যক্তিকে একবারের জন্যই যোগ্যতার বিচারে সরকারি, আধা-সরকারি অথবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য এটা বিবেচ্য হবে না।চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন ‘জুলাই শহীদ’- পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যরা। আহতদের ক্ষেত্রে যারা সারা জীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (অন্ধ কিংবা অঙ্গহানি) এবং আর কখনো কর্মক্ষম হতে পারবেন না, তাদের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ রকম আহতদের একটা বড় অংশই তরুণ এবং বাকি জীবন তাদের আন্দোলনের ক্ষত বয়েই বেড়াতে হবে, অনেককে দীর্ঘকাল চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। গতকাল নতুন করে স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে কোটা প্রয়োগের বিরোধিতা করে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রঅধিকার পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহত পরিবারের সন্তানদের সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কোটা থাকতে পারে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে ছাত্রঅধিকার পরিষদ।ছাত্রধিকার পরিষদ নেতা বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত বা আহতদের পরিবারের সদস্যদেরকেও কোটাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই কোটা বৈষম্যকে বিলোপ করার জন্য যেই ২০১৮ সালে আন্দোলন করেছিলাম। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হয়। কিন্তু আমরা ৭ মাস পার না হতেই দেখছি, যে বৈষম্যবিরোধী চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের বৈষম্য রোধ করতেই এই ছাত্রঅধিকার পরিষদের জন্ম হয়েছে। আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করেছি। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করেছি। সেই জায়গা থেকে আমরা আবার বলছি, যে কোটাব্যবস্থা চালু রয়েছে, তার বিলোপ সাধন করতে হবে। যদি না করা হয়, ছাত্র অধিকার পরিষদ তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন শুরু করবে।
Discussion about this post