স্পোর্টস রিপোর্ট: আজ অষ্টম বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ফাইনালে বহুমুখী লড়াই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স আর ফরচুন বরিশালের মধ্যে। সেই লড়াইটি যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিটে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঠে গড়াবে ফাইনাল। দুই দলের কোচ এবং অধিনায়কের মধ্যে সাফল্য পাওয়ার লড়াইয়ের সঙ্গে শিরোপা জয়েরও লড়াই। কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জুটি সবসময়ই দারুণ সফল বিপিএলে। তাদের দল ঢাকা ডায়নামাইটস টানা ৩ ফাইনাল খেলেছে। এর মধ্যে ২০১৬ বিপিএল শিরোপা জিতলেও ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রানার্সআপ হন তারা। আর কুমিল্লায় কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও ইমরুল জুটিও বেশ সফল। ২০১৫ সালে অবশ্য মাশরাফির নেতৃত্বে খেলেন ইমরুল এবং ২০১৮ সালে অধিনায়ক ছিলেন। দুইবারই দলকে সালাউদ্দিন শিরোপা জেতান। এর মধ্যে ২০১৮ সালে শিরোপা যুদ্ধে সুজন-সালাউদ্দিন লড়াইয়ে বিজয়ী সালাউদ্দিন। এবার তাদের মধ্যে আরেকটি ফাইনাল। তৃতীয়বার কুমিল্লার আরেকটি শিরোপা জয়ের লক্ষ্য। আর বরিশালের কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে তৃতীয় ফাইনালে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। অধিনায়ক হিসেবে একবার করে শিরোপা জিতেছেন সাকিব ও ইমরুল। দুজনেরই এবার সংখ্যাটা বাড়ানোর লক্ষ্য। এবার বিপিএলের রাউন্ড রবিন লীগ পর্বে দুর্দান্ত ছিল ফরচুন বরিশাল। মাত্র ২ ম্যাচ হেরেছে তারা লীগ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকা ও তৃতীয় ম্যাচে কুমিল্লার কাছে। এরপর আর পরাজয় দেখেনি অধিনায়ক সাকিব ও কোচ সুজনের দলটি। সাকিব তো টানা ৫ ম্যাচেই দলকে জিতিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে বিশ^রেকর্ড গড়েছেন। সুজন-সাকিব জুটিটা পুরনো। অনেক আগে থেকেই তারা একই দলে বিপিএলে ছিলেন। কোচ সুজন অবশ্য শিরোপা জিতেছেন একবারই, ২০১৬ সালের তৃতীয় বিপিএল আসরে। সেবার সাকিবও অধিনায়ক হিসেবে প্রথম শিরোপা জয় করেন। যদিও ২০১৩ বিপিএলে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে খেলে সাকিব ট্রফির স্বাদ পেয়েছিলেন। এরপর সাকিব-সুজন জুটি ২০১৭ ও ২০১৮ সালেও ঢাকা ডায়নামাইটসকে ফাইনালে তোলে। কিন্তু হেরে যান। ২০১৭ সালে মাশরাফির রংপুর রাইডার্স এবং ২০১৮ সালে ইমরুলের কুমিল্লা হারিয়ে দেয় তাদের। তবে এই জুটির ফাইনাল ভাগ্য বেশ ভাল। জুটি হিসেবে এ নিয়ে চতুর্থবার ফাইনালে তারা। তাই এবার সাফল্যটা ফিরে পাওয়ার লড়াই সাকিব-সুজনের। যদিও ফাইনালের আগের দিন অনুশীলনে শারীরিক অসুস্থতায় থাকা হয়নি সাকিবের। এমনকি ফাইনালের ট্রফি নিয়ে কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুলের সঙ্গে ফটোসেশন করেছেন বরিশালের সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। তবে সাকিবের আজ খেলা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। কিন্তু যেভাবে দুর্দান্ত খেলেছে দলটি এখন পর্যন্ত তাকে করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে অন্যতম ফেবারিট বরিশালই। দলের ব্যাটিং-বোলিংয়ে দারুণ ভারসাম্য। বিশেষ করে স্পিন বিভাগে আফগানিস্তানের মুজিব উর রহমান ও সাকিব জুটি যে কোন দলের ব্যাটিংয়ের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে। তাদের করা ৮ ওভারই কুমিল্লার জন্য কঠিন পরীক্ষা। এছাড়া ফর্মে থাকা উইন্ডিজ অলরাউন্ডার ডোয়াইন ব্রাভো ও মেহেদি হাসান রানার পেস বোলিংয়েও দারুণ ব্যালেন্সড বরিশাল। দলের ব্যাটিংয়ে ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার নিয়মিত পারফর্মার। সাকিব-ক্রিস গেইলসহ বাকিরাও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অবদান রেখেছেন। কুমিল্লাও লীগ পর্বে দুর্দান্ত ছিল। তারা ৩ ম্যাচ হেরেছে। দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবেই ওঠে কোয়ালিফায়ারে, কিন্তু বরিশালের কাছে হেরে যায় মাত্র ১০ রানে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানেই জয় পায় চট্টগ্রামের বিপক্ষে। এখন পর্যন্ত চলতি আসরে লীগ পর্বে ২ বার এবং কোয়ালিফায়ারে একবার বরিশালের মোকাবেলা হয়েছে কুমিল্লার। ১ বার জিতলেও বাকি দুইবার হেরেছে ইমরুল-সালাউদ্দিন জুটির কুমিল্লা। এবার প্রতিশোধ নেয়ার পালা তাদের। অবশ্য এই জুটি ২০১৮ সালের ফাইনালে সাকিব-সুজন জুটির বিপক্ষে জিতেছে। তাই শিরোপা লড়াইয়ে জয়ের রেকর্ডটা অনুপ্রেরণা দেবে ইমরুলকে। ২০১৫ সালেও সালাউদ্দিনের অধীনে কুমিল্লায় খেলেছেন ইমরুল, সেবার মাশরাফির নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছেন। সাকিব-ইমরুল দুজনই অধিনায়ক হিসেবে ১ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এবার দুজনেরই আরেকবার শিরোপা জয়ের লড়াই। তবে খেলোয়াড় হিসেবে ৪টি ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা সাকিবের, সেখানে ইমরুলের অভিজ্ঞতা দুটি। ২০১২ সালের প্রথম আসরেই বরিশাল বার্নার্স ফাইনাল খেলে এবং ২০১৫ সালে বরিশাল বুলস ফাইনালে ওঠে। দুইবারই ট্রফি জিততে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এরপর আর বরিশালের কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিই ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারেনি। সাকিব-সুজন জুটি এবার ফরচুন বরিশালের ভাগ্য ফেরাতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। ইমরুলের কুমিল্লায় অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু প্লেসিস, ইংলিশ অলরাউন্ডার মঈন আলী ও উইন্ডিজ অলরাউন্ডার সুনিল নারাইন দারুণ ফর্মে আছেন। এছাড়া মাহমুদুল হাসান জয় ও লিটন দাসও পারফর্ম করেছেন। বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমান, নারাইন, মঈনদের পাশাপাশি দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ডানহাতি পেসার শহিদুল ইসলাম নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তাই সার্বিকভাবে আজকের লড়াইটি হতে চলেছে উত্তেজনায় ভরপুর।
Discussion about this post