সৌমিত্র সুমন,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি: একটা সময় গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পারিবারিক খামারে মহিষ পালন দেখা যেত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বিলে চোখ বুলালে দেখা যেত মহিষের পাল। দল বেঁধে খাওয়া আর বিলকে মাতিয়ে রাখাই ছিল মহিষের কাজ। গ্রামের মধ্যে যাদের জমি বেশি থাকত তাদের মহিষও বেশি থাকত। মহিষের দুধ আর মাংসের জন্য লালন-পালন করত তখনকার কৃষকেরা। হালচাষের জন্য ছিল মহিষের আলাদা কদর। সময়ের পরিবর্তনে এখন আর চোখেই পড়ে না মহিষ পালন। দলবেঁধে ঘুরতে দেখা যায়না বিলে। বর্ষা মৌসুমে হালচাষে নেই মহিষের উপস্থিতি। দুধ আর মাংসের জন্য বিখ্যাত হলেও এখন আর নেই এসবের সহজলভ্যতা। হারিয়ে যেতে বসছে ঐতিহ্যের মহিষ পালন। সোমবার কলাপাড়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে বাবা দাদার পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। একদিকে মহিষের খাদ্য সংকট অন্যদিকে গ্রামগঞ্জের খাল দখলে পানি না থাকায় একেবারে হারিয়ে যেতে বসছে মহিষ পালন। কৃষকরা বলেন, একটা সময় আমরা বিলে মহিষ ছেড়ে দিয়ে লালন পালন করতাম। পুরো খালে বিলে পানি আর ঘাসে পরিপূর্ণ থাকত। রোগ বালাই কম হত। বিশেষ করে হালচাল করার প্রধান মাধ্যম ছিল মহিষ। সকাল থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত টানা হাল চাষ করা যেত। তখনকার সময় পাওয়ার টিলার ছিলোনা। খরচ লাগত কম হালচাষে। এখন আর মহিষ দিয়ে কেউ হালচাষ করেনা। আমরা যারা মহিষ লালন পালন করি এখন তারা খুব কষ্টে আছি। খাবার, পানি, চিকিৎসা সব মিলিয়েই সংকট। হয়ত কয়েক বছর পর কেউ মহিষ পালন করবেনা। নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. জাকির হাওলাদার বলেন, আমাদের একটা সময় ৬০ থেকে ৭০টি মহিষ ছিল। এ গ্রামে অনেকেই মহিষ পালন করত। এখন আমাদের পরিবারে ২০টির মত মহিষ আছে। খাবার, পানির অভাবের কারনে মহিষ পালন করা যায়না। মহিষের খাবার কিনে খাওয়ানো সম্ভব নয়। প্রতিদিন ২মন খাবার ও ১মন পানির প্রয়োজন হয়। এখন আর মহিষ দিয়ে হাল চাষ হয়না। সব মিলিয়ে বিলুপ্ত প্রায় এ মহিষ জাতটি। ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দা সবুজ বলেন, এখন রোগ বালাই হয় অনেক। বিশেষ করে খাবার সংকটের কারনেই মহিষ পালন করা কষ্ট সাধ্য। আগে বিল বাওড় খোলা ছিল। ইচ্ছে মত মহিষ ছেড়ে দিতাম। এখন আগের মত পানি ও ঘাস না থাকার কারনে আমরা মহিষ পালন ছেড়ে দিয়েছি। একই এলাকার বাসিন্দা হানিফ শরীফ বলেন, মহিষ পালনে লাভবান হওয়া যায়। একটা ১বছর বয়সি মহিষের বাচ্চা ৫০-৬০ হাজার টাকায় বিক্রি সম্ভব। প্রতিদিন ৫-৬ কেজি দুধ দোহন করা সম্ভব। একটা মহিষ জবাই করলে প্রায় ৬মন গোসত মিলে এসবের পরও কিন্তু খাবার,ঔষধ ও পানির সংকটে অনেক কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কলাপাড়া পশু চিকিৎসক আবু সাইদ জানান, নীলগঞ্জ ইউনিয়নে হাতে গোনা ৩ টা ৪টা পরিবারে দেখা যায় মহিষ পালন। তবে খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য হলে আগ্রহ বাড়ত কৃষকদের। পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল হক সরদার বলেন, মহিষ পালন একেবারে কমে যাচ্ছে ধারনা ভুল। কলাপাড়ায় দুটি উৎপাদন গ্রুপ আছে। প্রত্যেক গ্রুপে ৪০ জন সদস্য আছে। যেখানে প্রায় ১৩হাজার মহিষ আছে যা পারিবারিক খামারে বেড়ে উঠছে। তবে খাদ্য সংকট আছে। আমরা মুজিব কিল্লায় ও পরিত্যক্ত জঙ্গলে ঘাস উৎপাদন করা যায় কিনা এটার ব্যপারে পদক্ষেপ গ্রহন করব।
Discussion about this post