ঢাকা: দীর্ঘ ১৭ মাস পর কাল বাদে পরশু (১২ সেপ্টেম্বর) সারা দেশে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুয়ার খুলছে। দেশের করোনা পরিস্থিতিও কিছুটা কমতে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে করোনা সংক্রমণ যদি আবারও বাড়তে থাকে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীতে সরকারি তিতুমীর কলেজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারো স্কুল-কলেজ বন্ধ হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি দেখি আমাদের সংক্রমণ হার বেড়ে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে, তখন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা পরামর্শ সেভাবে দেব, আমরা চাইব না যে আমাদের ছেলেমেয়েরা সংক্রমিত হয়ে যাক। অনেক দেশে বেশ কয়েকবার খুলে আবার বন্ধ করেছে স্কুল-কলেজ। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শুরু হয়ে যাক যদি কোনো রকমের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় তাহলে পরে আমরা স্কুল আবার বন্ধ করে দেব। এ সময় পরীক্ষার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এর আগে মেডিকেল টেস্ট পরীক্ষা আমরা নিয়েছি যেখানে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে এবং অন্যান্য পরীক্ষা চলছে আমাদের। যেমন নার্সিং পরীক্ষা চলছে। তারপরও প্রফেশনাল পরীক্ষাগুলো চলেছে এবং আজকে আমরা বাংলাদেশ ডেন্টাল সার্জারি পরীক্ষা নিচ্ছি এখানে আমাদের চার হাজার পরীক্ষার্থী সারা বাংলাদেশে মোট পঞ্চাশ হাজার পরীক্ষা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখানে অনেকে পরীক্ষা দিতে আসেনি কারণ অনেকেই অন্যান্য জায়গায় হয়ত চান্স পেয়ে গেছে। একটা সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা হচ্ছে এবং পরীক্ষার্থীদের সাথে একটু কথা বললাম তারা পরীক্ষার আয়োজনে সন্তুষ্ট এবং তাদের যে প্রশ্নপত্র সেটি স্ট্যান্ডার্ড প্রশ্নপত্র হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। পাবলিক সার্ভিসের কোনো পরীক্ষায় বাদ নেই। আমরা সব সময় পরীক্ষা নিয়েছি এবং স্বাস্থ্যবিধি সবকিছু মেনে নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই না যে আমাদের ছেলেমেয়েদের জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হয়ে যাক। এটা আমরা জানি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা চেষ্টা করেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের সাথে অনেক অভিভাবক এসেছেন। এটা এখন উনাদের ইচ্ছা আমরা তো আর না করতে পারি না। আমাদের বলা ছিল যে আপনারা বেশি আসার প্রয়োজন নেই। আর এসব শিক্ষার্থী তো এডাল্ট। এদের সকলের সঙ্গে তিন-চারজন এসেছে তাদের চাপে তো আমি ঢুকতে পারছিলাম না এভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। আপনার বলেছিলেন ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসবেন। কিন্তু পরে বলা হয়েছে ১৮ বছরের নিচে কারও টিকা দেওয়া হবে না। তাহলে এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্কুল খেলার সঙ্গে আর টিকা দেওয়ার সঙ্গে খুব একটা বেশি আমি সম্পৃক্ততা দেখছি না। কারণ ১২ বছর থেকে ১৮ বা ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে আসেনি। জাহিদ মালেক বলেন, পৃথিবীর খুব বেশি দেশে এ বয়সের ছেলেমেয়েদের টিকা দেওয়া হচ্ছেনা দু-একটা দেশে পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হচ্ছে এবং লক্ষ্য করা হচ্ছে যে কী রকম ফলাফল আসে। আমরাও একই জিনিস অনুসরণ করছি। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে আলোচনা করছি, যখন তারা অনুমোদন দেবে তখন আমরা টিকা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া একটা ভালো দিক হলো যে যারা অল্প বয়স্ক ছেলে মেয়েরা তাদের সংক্রমণ কিন্তু খুবই কম। স্কুল-কলেজ খুলছে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য বিধি প্রণয়ন করেছে আমাদের সাথে আলোচনা করেই এবং নির্দেশনা রয়েছে সেই অনুযায়ী তারা ক্লাসের কাজকর্ম শুরু করেন দেবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সংক্রমণ হার অনেক কমে ৮ এ নেমে আসছে এবং মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। সেজন্য আমরা একটু সাহসী হয়েছি। আজকের সংক্রমণের হার কমেছে বলেই স্কুল-কলেজ খোলার চিন্তাভাবনা হচ্ছে, পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এবং মিল ফ্যাক্টরি ভালোভাবে চলছে। সামাজিক অবস্থা চলছে এমনকি নির্বাচনের কথা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু সংক্রমণ যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকতো তাহলে পরে কিন্তু এটা সম্ভব হতো না। টিকার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের টিকা দেওয়ার সক্ষমতা অনেক। আপনারা জানেন যে প্রায় একদিনই আমরা ৩৪ লাখ টিকা দিয়েছি। এছাড়া আমরা গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) কোভ্যাক্সের আওতায় ১৮ লাখ টিকা পেয়েছি। এর আগে ১০ লাখ পেয়েছি। এ মাসে আমরা আশা করছি যে চীন থেকে ২ কোটি টিকা পাব এবং এ বিষয়টি আপনাদের আগেই জানিয়েছি এবং টিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। গণটিকা কার্যক্রম আবারও চালু করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া আমরা প্রত্যেক সপ্তাহে টিকা পাওয়ার একটা শিডিউল পেয়েছি। এখন থেকে যেমন আজকে ১০ তারিখ চীন থেকে ৫০ লাখ টিকা পাওয়ার সিডিউল পেয়েছি। এভাবে এই মাসেই চারটা সিডিউল অনুযায়ী চলে আসলে আমাদের কার্যক্রম চলতে থাকবে এবং প্রত্যেক মাসেই প্রতি সপ্তাহে ৫০ লাখ টিকা আসবে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত। মন্ত্রী আরও বলেন, কোভাক্স থেকে টিকা আসছে সেটাও যোগ হয়ে যাবে। আপনারা জানেন আমরা কোভ্যাক্সের সাড়ে ১০ কোটি টিকার অর্ডার দিয়েছি যেটা অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আসার কথা। তারা যদি সিডিউল অনুযায়ী আমাদের টিকা দেয় তাহলে আমাদের ঠিকা দেওয়ার হার আরও বাড়বে। তাই এ বছরসহ আগামী বছরের কয়েক মাস টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে। অর্থাৎ আমাদের হাতে যতক্ষণ টিকা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চলমান থাকবে, থামবে না। ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ফাইজারের টিকা দেওয়া আমরা শুরু করব। যেভাবে নরমালি অন্যান্য টিকা দেওয়া হচ্ছে ফাইজারের টিকাও সেভাবে দেওয়া হবে। যেখানে যেখানে দেওয়া সম্ভব সেখানেই দেব। কেননা ফাইজারের টিকার তাপমাত্রার একটা বিষয় আছে। মাইনাস ৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে এই টিকা রাখতে হয়। তাই যেসব জায়গায় রাখা সম্ভব সেসব জায়গায় আমরা রাখি এবং সেখান থেকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
Discussion about this post