ঢাকা: ইভিএমে ভোটকেন্দ্রে জালিয়াতির সুযোগ না থাকলেও গোপন কক্ষে ‘ডাকাত’ ঠেকানোর কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান। ইসি আহসানের এই বক্তব্যকে ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে দেখছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কে এম মহিউদ্দিন। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলছেন, ‘ইসি আহসানের বক্তব্য কিছুটা আশার সঞ্চার করতে পারে।…তিনি ক্লিয়ার করেছেন যে, এটা একটা সমস্যা, সেটা তিনি শনাক্ত করেছেন। আগে তো কেউ স্বীকার করেনি এই রকম সমস্যা আছে।’ ইসি আহসানের বক্তব্য সরল ভাবে নিচ্ছেন না সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। ঢাকাটাইমসকে এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, তার মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ইভিএমের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। আর ইসি আহসানের এই বক্তব্য সমর্থন করছেন স্থানীয় সরকার ও শাসন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার কেন্দ্রে ভোট ডাকাতের যে কথা বলছেন সেটা খুব ভাল বলেছেন। সবাই যা বলছে তিনি তা স্বীকার করছেন। এটা বাস্তব বিষয় তারা বুঝতে পেরেছে।’ ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সোমবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ইসি আহসান হাবিব গোপন কক্ষে ‘ডাকাত’ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইভিএমের চ্যালেঞ্জ একটাই। আর কোনো চ্যালেঞ্জ আমি দেখি না।’ ‘সেটা হচ্ছে-একটা ডাকাত, সন্ত্রাসী, ওই গোপন কক্ষে একজনকে দাঁড়িয়ে রাখা। আপনার ভোট হয়ে গেছে, চলে যান। দিজ ইজ দ্য চ্যালেঞ্জ। ড. মহিউদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ইসি বলছে এক কথা, চট্টগ্রামে এক প্রার্থী বললেন ইভিএমের বাটন টিপতে আরেকজন কেন্দ্রে থাকবে। সব মিলিয়ে একটা বিষয় হলো—গত কয়েকটা নির্বাচনে…দেশের নাগরিকদের নির্বাচনের ওপর আস্থা উঠে গেছে।’ ‘এখন ইসি আহসানের বক্তব্যে কিছুটা আশার সঞ্চার করে, হয়ত ইসি চরম রোল প্লে করতে পারে। তবে সেটা কতটুকু পজেটিভ হবে বলা খুব মুশকিল। তার বক্তব্যটা পজেটিভ ধরা যায়। উনি (আহসান হাবীব) ধারণ করতে পারছেন এই এই সমস্যাগুলো আছে।’ ইভিএম নিয়ে ভোটকেন্দ্রে মানুষের সমস্যা ইসি আহসান শনাক্ত করতে পেরেছেন বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। বলেন, ‘উনি বললেন ডাকাতদের খপ্পড়ে অসহায়…। মানুষের সমস্যাটা শনাক্ত করতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে কী করবেন সেটা বলা যাচ্ছে না।’ ‘তবে ইসি আহসান ক্লিয়ার করেছেন যে, এটা একটা সমস্যা। সেটা তিনি শনাক্ত করেছেন। আগে তো কেউ স্বীকার করেনি এই রকম সমস্যা আছে। এককথায় মন্দের মধ্যে ভালো।’ ইসি আহসানের এমন বক্তব্যের বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার আশংকা নির্বাচন কমিশন ইভিএমের পক্ষে প্রচারের জন্য নেমেছেন। যদিও তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে দুইজন কমিশনার বক্তব্য দিচ্ছেন।’ ‘ইসি একদল ব্যক্তিকে নিয়ে পাবলিক ডিবেইট করলেন, যদিও আমি জানি একজন বিশেষজ্ঞের নাম এসেছে তিনি সেখানে ছিলেন না। তারা যদি ওপেন মাইন্ড হতেন এগুলো নিয়ে প্রযুক্তিবিদসহ বিভিন্ন জনের সঙ্গে পর্দার অন্তরালে মিটিং করতেন না।’ ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন বলেও ধারনা করছেন সুজন সম্পাদক বদিউল। বলেন, ‘মনে হচ্ছে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন। এটা ভয়াবহ। আমি বিশ্বাস করি, সবচয়ে উত্তম ভোটিং মেশিন হতে পারে কিন্তু বিহাইন্ড দ্য মেশিন যারা আছেন তারা খুব ইম্পোর্টেন্ট।’ ‘যদিও আমরা সবাই বলছি নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু তৈমুর আলম খন্দকার যে দাবি করলেন ডিজিটাল জালিয়াতি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করুক তৈমুর ভুল বলেছেন। পারবে? এখানে কোনো পেপার ডকুমেন্ট নাই, নির্বাচন কমিশন যে তথ্য দেয় সেটাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু প্রমাণ দিতে পারছে না ভোট চুরি হয়নি।’ প্রয়াত শিক্ষাবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ছিলেন। খ্যাতনামা এই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ইভিএম মেশিন কেনার বিরুদ্ধে ছিলেন। কেন ইভিএমের বিরোধিতায় ছিলেন সেই ব্যাখ্যা দেন বদিউল আলম। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘কারণ এই মেশিন পেপার ট্রেস ডকুমেন্ট পাওয়া যায় না। মেশিনে ইন্সট্রাকশন দিলে কারও নাম বাদ দিতে পারেন বা কারো নাম যুক্ত করতে পারেন। ইভিএম প্রোগ্রাম দ্বারা পরিচালিত। আপনি চাইলে প্রোগ্রাম সেট করতে পারবেন।’ সংশ্লিষ্টরা কেন এই বিষয়টি এড়াচ্ছেন বুঝতে পারছেন না মন্তব্য করে বদিউল আলম বলেন, ‘আমি জানি না, কেন আমাদের বিদগ্ধজনরা এই সাধারণ জিনিসটা উপেক্ষা করছে। আর এখন নির্বাচন কমিশন যা করতে চেষ্টা করছে আমার মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ইভিএমের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে।’ আর স্থানীয় সরকার ও শাসন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল বলছেন, ‘ইসি আহসানের মতো আমিও একই কথা বলেছি। ইভিএম মেশিনের চেয়ে বড় হচ্ছে কেন্দ্র দখল। এখন নির্বাচন কমিশন সেটা প্রিভেন্ট করার ব্যবস্থা করুক। এটার জন্য কি করা দরকার সেই ব্যবস্থা তারা নিক।’
Discussion about this post