স্পোর্টস ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগেও অঙ্কের মারপ্যাঁচে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিকে ছিল বাংলাদেশ। নিভু নিভু করে জ্বলছিল লাল-সবুজের সেমিফাইনালের স্বপ্ন। তবে এমন স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। তবে শেষমেশ আবুধাবির মাঠে মঞ্চায়িত হলো একই চিত্রনাট্য। সুপার টুয়েলভে এ নিয়ে টানা চতুর্থ পরাজয় টাইগারদের। মঙ্গলবারের (২ নভেম্বর) ৬ উইকেটের এই হারের মধ্য দিয়ে সব হিসেব চুকিয়ে বিশ্বকাপই বিদায় দিয়ে দিল বাংলাদেশকে। আর তাই আগামী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে উঠার পর সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের হুঙ্কার, মাহমুদউল্লাহর অনুযোগ কিংবা মুশফিকের ‘আয়নায় মুখ দেখার’ মতো অনেক কথা আর গালগল্পের সাক্ষী হয়েছিল লাল-সবুজের সমর্থকরা। কিন্তু দিনশেষে এমন ভরাডুবির দায় কতটুকুন এড়ানো যায় আসলে? প্রতিম্যাচ শেষে শিক্ষা নেওয়ার গল্প আর কতদিন তোতাপাখির মতো আওড়াবেন ক্রিকেট মাদকতায় বুঁদ থাকা সতেরো কোটি মানুষের দেশের কাণ্ডারিরা। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও ‘দম্ভ’ কমছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কখনো জাতীয় দলে না খেলা টাইগার হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর। স্বদেশিদেরকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি কি বলবেন? বিশ্বের ধনী ক্রিকেট বোর্ডের তালিকায় সেরা চারে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) কি আদৌ কোনো দায় এড়ানোর সুযোগ আছে?মিরপুরের পিচ নিয়ে এতদিন বিদেশি দেশগুলোর তোলা অভিযোগ যে অমূলক ছিল না সেটি যেন টাইগারদের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে। যে দল অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে ধসিয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসে টানা চার ম্যাচ হারে তাদের সামর্থ্য এবং প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। নিঃসন্দেহে এবারের আসরের সবচেয়ে ব্যর্থ দল হিসেবে এক ম্যাচ হাতে রেখেই বিদায় নিল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের তুলনামূলক দুর্বল দল নামিবিয়াও প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে নিজেদের সামর্থ্য জানান দিচ্ছে বিশ্বকে।২০০৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এ পর্যন্ত হওয়া সাতটি আসরে মূল পর্বে মাত্র একটি জয়। তাও প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর আর কোনো জয়ের মুখ দেখেনি টিম টাইগার্স। দলের নিয়মিত সদস্য সাইফুদ্দিন, সাকিব এবং সোহানকে ছাড়াই মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। এমনিতেই ব্যর্থতার বৃত্তে থাকা দলের জন্য এমন পরিস্থিতি আরও বিপর্যয় আনবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। হলোও তাই। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৮৪ রানেই গুটিয়ে গেছে দামাল ছেলেদের ইনিংস। খেলা শেষ হয়ে গেছে তখনই। যখন মুশফিক-সৌম্য আর আফিফরা রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে গেছেন।
তবে পরিণতি আগে থেকে জেনেও এদিন বল হাতে ভালো লড়াই করেছেন তাসকিন-মেহেদীরা। প্রথম ওভারেই রেজা হেনড্রিকসকে ফেরান তাসকিন। রাবাদা-নর্টজেরা যে উইকেটে গতির ঝড় তুলেছেন, টুর্নামেন্টের অন্যতম সর্বোচ্চ গতির বোলার তাসকিনই বা বাদ যাবেন কেন! প্রথম দফা পরাস্ত করেও অবশ্য হেনড্রিকসের উইকেট পাননি। তবে ওভারের শেষ বলে পেলেন সেটা। ব্যাক অব আ লেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ৮৮ মাইল, হেনড্রিকস মিস করে গেছেন সেটা। আম্পায়ার পল রাইফেলের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত রিভিউ করেননি। ৬ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ৪ ওভারে ২০ রান ওঠার পর মেহেদী হাসানের ওপর চড়াও হয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক। এ অফ স্পিনারকে টানা দুই চার মেরেছেন তিনি। তবে বোল্ড হয়েছেন এরপর। স্কিড করা ডেলিভারি মিস করে গেছেন এ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। ২৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মেহেদীর পর আবারো তাসকিনের আঘাত। এবার তার শিকার হয়েছেন এইডেন মার্করাম। স্লিপে থাকা নাঈমের হাতে ক্যাচ দিয়ে কোনো রান না করেই ফিরে গেছেন প্রোটিয়া এই ব্যাটসম্যান। দলীয় ৩৩ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
Discussion about this post