আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আর্জেন্টিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনারের ৬ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে দেশটির উচ্চ আদালত। এই রায়ের ফলে ৭২ বছর বয়সী কির্চনার আর কখনো কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। তাকে গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয় এবং আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। গত দুই দশক ধরে আর্জেন্টিনার বামপন্থী পেরোনিস্ত আন্দোলনের প্রতীক ছিলেন ক্রিস্টিনা কির্চনার, যিনি দেশটির সমাজে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলেন। স্বামী নেস্তর কির্চনারের পর তিনি ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২৩ সালের লিবার্তেরিয়ান হাভিয়ের মিলেইয়ের নির্বাচন পর্যন্ত তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বামপন্থী জাস্টিসিয়ালিস্ট পার্টির প্রধান এবং ডানপন্থী মিলেই নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান বিরোধী দলের নেতা কির্চনার তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের অভিযোগও তুলেছেন। কির্চনার এই রায়ের সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ তিনি বুয়েনস আইরেস প্রাদেশিক আইনসভায় আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিকভাবে ফিরে আসার পরিকল্পনা করছিলেন। মিলেই সরকারসহ অনেক আর্জেন্টাইন কির্চনারের বিরুদ্ধে দেশ থেকে অর্থ চুরি এবং দেশের অর্থনীতিকে একের পর এক সংকটে ফেলার অভিযোগ আনেন। উগ্র লিবার্তেরিয়ান এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিলেই, কির্চনারের পেরোনিস্ত রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি জনগণের ক্ষোভকে পুঁজি করেই ২০২৩ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং আর্জেন্টিনাকে নাটকীয়ভাবে ডানপন্থার দিকে নিয়ে যান। কির্চনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তিনি এবং তার প্রয়াত স্বামী একটি নির্মাণ সংস্থা তৈরি করেছিলেন, যা সান্তা ক্রুজ প্রদেশে কাজ পেয়েছিল। তদন্তে উঠে এসেছে যে, ১২ বছর ধরে তাদের সংস্থা প্রদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ সরকারি কাজ পেয়েছিল। ২০২২ সালে কির্চনারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তিনজন বিচারকের একটি প্যানেল তাকে জনগণের বিপুল অর্থ পারিবারিক বন্ধুর কাছে পাঠানোর জন্য প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। তবে কির্চনার বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও পৃথক দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। কির্চনারের বিরুদ্ধে এখনো দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। গত মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কির্চনারকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধ করেন। দায়িত্বে থাকার সময় ‘উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার’ কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রুবিও। এখন সুপ্রিম কোর্ট সাজার রায় বহাল রাখায় সাবেক প্রেসিডেন্ট কির্চনার কারাবাস ভোগ করবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে তার বয়স বিবেচনায় কারাভোগ মওকুফ হতে পারে। আর্জেন্টিনার আইন অনুযায়ী, ৭০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের গৃহবন্দী থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। কির্চনারের আইনজীবী গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গৃহবন্দী রাখার বিষয়ে তারা আবেদন করবেন। এদিকে আদালত কির্চনারের জন্য ‘বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার’ নির্দেশ দিয়েছে, কারণ ২০২২ সালে কির্চনারকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল। রায় ঘোষণার পর গতকাল মঙ্গলবার দলের প্রধান কার্যালয়ের বাইরে সমর্থকদের উদ্দেশ করে কির্চনার বলেন, “বরাবরের মতো, আমরা আমাদের জীবন বাজি রাখব। কারণ আমরা পালিয়ে যাই না, ওইটা ডানপন্থী মাফিয়ারা করে। আমরা পেরোনিস্তরা এখানে থাকি এবং আমাদের মুখ ও জীবন বাজি রাখি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা মাফিয়া নই।” এই রায় আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
Discussion about this post