ঢাকা: আজ ২৭ নভেম্বর, শহীদ ডা. মিলন দিবস। ১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে চিকিৎসক নেতা ডা. শামসুল আলম খান মিলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ডা. মিলনের রক্তদানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চারিত হয় এবং ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতন ঘটে। সেই থেকে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন রাজনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি শহীদ ডা. মিলন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। বরাবরের মতো এবারো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশবাসীর সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ডা. শামসুল আলম খান মিলনের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি পালন করবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি এক বিবৃতিতে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবসের কর্মসূচি পালনের জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সকল শ্রেণির কর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি বিনীত আহ্বান জানিয়েছেন। এ উপলক্ষে জাসদের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ ভোর ৬টায় দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শহীদ ডা. মিলনের সমাধি ও সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি সংলগ্ন শহীদ ডা. মিলন সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিএমএসহ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় যোগদান। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের বীর শহীদ ডা. মিলনের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে স্বৈরশাসনের উত্থান ঘটে। শহীদ ডা. মিলনের মতো আরও অনেকের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯০ সালে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দেশের প্রতিটি গণতন্ত্রকামী মানুষ এসব বীর শহীদের অবদান চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’ প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ডা. মিলনের আত্মত্যাগ নতুন গতি সঞ্চারিত করে। তিনি বলেন, ‘সেদিনই দেশে জরুরি আইন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু জরুরি আইন, কার্ফু উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে বারবার রাজপথে নেমে আসে। অবশেষে স্বৈরশাসকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।’ ডা. শামসুল আলম খান মিলন পেশাগত সততা, দক্ষতা ও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি তৎকালীন বিএমএর নির্বাচিত যুগ্ম-সম্পাদক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও কলেজের বায়োকেমিস্ট বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি পেশাজীবী ও রাজনীতিক নেতাদের কাছে ছিলেন প্রিয়জন ও প্রিয়মুখ। ডা. শামসুল আলম খান মিলন স্মরণে জাসদ আয়োজিত আলোচনায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেছেন, বিএনপির ক্ষমতা পুনর্দখলের আন্দোলন দেশকে সংবিধানের বাইরে ফেলে দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা এবং জঙ্গিবাদীদের রাজনীতির মাঠে পুনর্প্রতিষ্ঠা করার পথে এগুচ্ছে। তিনি বলেন, অসাংবিধানিক সরকার আনার অপরাজনীতি রুখে দিয়ে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানই দেশের সাংবিধানকি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার প্রধান কর্তব্য। তিনি শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার আত্মবলিদানের চেতনাকে ধারণ করে দেশে অসাংবিধানিক সরকার আনার অপরাজনীতি রুখে দেয়ার জন্য জাসদসহ ১৪ দলের নতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। শহীদ জাসদ নেতা ডা. শামসুল আলম খান মিলনের আত্মবলিদান দিবস উপলক্ষে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে শনিবার বিকেলে নগরীর শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন জাসদ সভাপতি। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, সহ-সভাপতি মীর হোসাইন আখতার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, নইমুল আহসান জুয়েল, মোঃ মোহসীন, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান বাদশা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাসদের সভাপতি ইদ্রিস ব্যাপারী, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাবুল, জাসদের দপ্তর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, জাতীয় যুব জোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমুখ। জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন স্কুল জীবন থেকেই সমাজতন্ত্রের দীক্ষা নিয়ে সমাজ বদল ও গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে সামনের কাতারে থেকে ভূমিকা রেখেছেন। সমাজতন্ত্রের আদর্শের শক্তিতে বলিয়ান হয়েই ডা. মিলন আত্মবলিদানের পথে এগিয়ে যাওয়ার দুঃসাহসিকতা অর্জন করেছিলেন। সভার শুরুতে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
Discussion about this post