ঢাকা: ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছেন’- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সাধারণ মানুষ নয়, সরকারের বশংবদরা বেহেশতে আছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডের নেতারা এখন কোটিপতি। শনিবার নয়াপল্টনে আরাফাত রহমান কোকো’র ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে জিয়া মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি একথা বলেন। ওই বক্তব্যের কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশবাসীর কাছে কৌতুক অভিনেতায় পরিণত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন রিজভী। বক্তব্যে রিজভী ইসরায়েলি উপকথা অনুযায়ী বর্ণিত হযরত নুহ (আ.) এর ছেলে শামের নাতি শাদ্দাদ বিন আদের বানানো কথিত বেহেশতের প্রসঙ্গ টানেন, যা পরে ঝড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নয়, সরকারের বশংবদরা বেহেস্তে আছে, আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডের নেতারা এখন কোটিপতি। লাখ কোটি টাকা লুটপাট করে যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, যারা বিদেশে অট্টালিকা তৈরি করেছে সেই টাকা পাচারকারীরা বেহেশতে আছেন। তবে সে বেহেশত শাদ্দাদের বেহেশত। অচিরেই সেই বেহেশত ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাজার গিয়ে পরিস্থিতি দেখার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, মোমেন সাহেব আপনি তো বাজারে যান না, রিকশাওয়ালার কথা শোনেন না, গরিব মানুষের কথা শোনেন না, একটা ডিমের দাম এখন সাড়ে বারো টাকা, এক হালি ডিমের দাম পঞ্চাশ টাকা, এক কেজি ইলিশ কিনতে দুই হাজার টাকা লাগে। সবজি বাজারে এখন আগুন, মানুষ চাল-ডাল-সবজি কিনতে পারছে না। অভাবের তাড়নায় মানুষ সন্তান বিক্রি করছে। জনগণ আপনাদের তৈরি করা আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তরা এখন হাহাকার করছে, এগুলো গণমাধ্যমে উঠছে, যদিও গণমাধ্যম চাপে আছে। তারপরেও অনেক কিছু গণমাধ্যমে উঠে আসছে। তিনি বলেন, গোটা দেশে এখন দুর্ভিক্ষের ছায়া বিস্তারলাভ করেছে। আপনারা বেহেশতের কথা বলে অহংকার করেন, জনগণের টাকা হরিলুট করে আপনাদের অনেক টাকা, আপনারা বেহেশত থাকতে পারেন, কিন্তু জনগণ আপনাদের দুঃশাসনের নরকে আছে। মোমেন সাহেব আপনার এই বক্তব্য ক্ষুধার্ত জনগণের সঙ্গে চরম রসিকতা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে রাজপথ দখলের হমকি দেন, যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না থাকে তাহলে আপনারা রাজপথ থেকে ভীত শৃগালের মতো পালিয়ে যাবেন। বিএনপি নেতা-কর্মীদের গুম করে, খুন করে, বিচারবর্হিভুত হত্যা করে, দেশের সম্পদ হরিলুট করে, চুরি করে আপনারা অহঙ্কার দেখাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া মাঠে নামলে আপনারা তুলার মতো উড়ে যাবেন। ‘আপনাদের দখলে থাকবে রাজপথ আরে যারা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলে তাদের দখলে থাকবে রাজপথ। আপনারাতো জনগণের অধিকার ডাকাতি করেছেন। আপনি এত বড় কথা বলেন, আপনার নেত্রীকে এক এগারোতে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কই তখনতো রাজপথে একটি মিছিল করতে পারেননি। ৫০০ লোক নিয়ে রাস্তায় নামতে পারেননি। ১৫ আগস্টের ঘটনার সময়তো আপনি ছাত্র নেতা। কই তখনতো আপনি রাস্তায় নামেননি। আপনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গুলি করে রাজপথ দখলে রাখবেন, যেভাবে গুলি করে নুরে আলমকে হত্যা করা হয়েছে, আব্দুর রহিমকে হত্যা করা হয়েছে। গুলি করে, হত্যা করে, নির্যাতন করে আর জনগণকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আপনাদের পতন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’ আরাফাত রহমান কোকো একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক ও নিরহংকার মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, রাজনৈতিক কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন আন্দোলন করছিলেন, তখন শেথ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে বালুর ট্রাক দিয়ে বন্দি করে রেখেছিলেন মায়ের সে দুর্দিন তাঁর ছোট সন্তান মেনে নিতে পারেননি। সেদিন মানসিকভাবে চাপে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছিল। পরে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাখফিরাত কামনা করেন রিজভী। আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ফয়েজ উল্লাহ ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post