ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়তে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ক্ষমতার প্রভাব এবং অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করে আসুন সবাই একসাথে একটি শান্তিময় পৃথিবী গড়ি। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়। একতরফা জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মত বৈরীপন্থা কখনও কোন দেশ বা জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। শুক্রবার নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বিকেলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে বাংলায় দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। কোভিড-১৯ মহামারী প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই বছর পর এবার ১৯৩টি সদস্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর অধিবেশন শেষ হবে। তিনি বলেন, আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান চাই। সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান না করে শান্তি বজায় রাখা যায় না। একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মানুষ খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন একটি বিশ্ব দেখতে চাই, যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। শেখ হাসিনা বলেন, এই অধিবেশন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, সহিংসতা ও সংঘাত, কোভিড-১৯ মহামারির মত একাধিক জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রতিকূলতায় পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহ আজ জর্জরিত। মানবিক চাহিদা গভীর হচ্ছে, জলবায়ু লক্ষ্যগুলি মূলত অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে, বৈষম্য আরও প্রকট হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, কোভিড-১৯ মহামারী, ফিলিস্তিন সমস্যা এবং অভিবাসন বিষয়ক বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, আড়াই বছর ধরে করোনাভাইরাস মহামারী যখন বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সেই বিধ্বংসী প্রভাব থেকে যখন একটু একটু করে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে একটি অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে, সঙ্কটের মুহূর্তে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা এবং সংকট সমাধানের মূল ভিত্তি হল জাতিসংঘ। তাই প্রথিবীর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সকলের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’ গঠন করায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, আমি বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সঙ্কটের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বৈশ্বিক সমাধান নিরূপণ করতে অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।
Discussion about this post