বিনোদন ডেস্ক: উন্মুক্ত কাঁধ। সেই কাঁধ বেয়ে পিছলে পড়ছে অস্কার মঞ্চের আলো। অস্কারের আলো আঁধারি মঞ্চে ভারতীয় অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন এসে দাঁড়ালেন সেই আলো গায়ে মেখেই। এই প্রথম অস্কারের মঞ্চে আসা তার। এই প্রথম আরও অনেক কিছুই দেখা গেল দীপিকার অস্কার-অবতারে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সোমবার (১৩ মার্চ) এই মঞ্চে দীপিকার মতোই প্রেজেন্টার হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, হ্যাল বেরি, নিকোলে কিডম্যান, ডোয়েন জনসনের মতো হলিউডের খ্যাতনামী অভিনেতা-অভিনেত্রী। তাদের পাশে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে উঠে আসা দীপিকার ওপর তাই আলাদা নজর ছিল। দীপিকা মঞ্চে এসে এক গাল হেসে কালো ভেলভেটের দস্তানা পরা হাত দুটি সামনে রেখে বক্তৃতা শুরু করেন। অল্প কথাতেই শেষ করেন দীপিকা। তবে সেই অল্প সময়েই ছবির নেপথ্য কাহিনী থেকে শুরু করে ইউটিউব ও টিকটকে গানটি কতবার দেখা হয়েছে, তার হিসাবও দেন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘নাটু নাটু’ প্রথম ভারতীয় সিনেমার গান, যা অস্কারের জন্য মনোনীত হলো। পাশাপাশি উপস্থিত হলিউডের খ্যাতনামী অতিথিদের উদ্দেশে দীপিকাকে বলতে শোনা যায়, এখনো যদি নাটুকে না চিনে থাকেন, তবে এবার চিনে নেয়ার সময় এসেছে। দীপিকার বক্তৃতা চলাকালীনই বার বার হাততালির শব্দ শোনা যেতে থাকে গ্যালারি থেকে। দীপিকা প্রত্যেকটি হাততালির শব্দে থামেন। এক গাল হাসি ফিরিয়ে দিয়ে আবার বলতে শুরু করেন। দীপিকার ওই বক্তৃতার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। ‘নাটু নাটু’র মতো তার বক্তৃতাও লাখ লাখ বার দেখা হয়েছে। তবে অস্কারের দীপিকার পোশাক, বক্তৃতার পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নজর করছেন ছবি শিকারিরা। প্রকাশ্যে এসেছে দীপিকার নতুন ট্যাটু। একদা রণবীর কাপুরের প্রেমিকা দীপিকা ঘাড়ে রণবীরের নামের অদ্যক্ষরের ট্যাটু করিয়েছিলেন। সেই ট্যাটু রণবীর সিংকে বিয়ের সময়ে মুছে ফেলেছিলেন দীপিকা। সম্প্রতি আবার ঘাড়েই আরও একটি ট্যাটু করিয়েছেন দীপিকা। নতুন ট্যাটুটি ঘারের বাঁ পাশে। আগের ট্যাটুর থেকে আকারে ছোট। কয়েকটি সংখ্যা ও অক্ষরের সমাহার। দীপিকার ঘাড়ে কালো রঙে লেখা ‘৮২°ই’। ৮২°ই আসলে একটি দ্রাঘিমা রেখা। যা ভারতকে আড়াআড়ি চিরে জুড়েছে সুমেরু ও কুমেরুকে। তবে দীপিকার ট্যাটুর অর্থ বোধ হয় শুধু সেই দ্রাঘিমা রেখার নাম নয়। দীপিকার ত্বক পরিচর্যার ব্র্যান্ডের নামও ‘৮২°ই’। দীপিকা নিজের নতুন ট্যাটুতে সম্ভবত সেই ব্র্যান্ডের প্রচারও করেছেন অস্কারের মঞ্চে। তবে অস্কারে দীপিকাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্কও। অস্কারে উপস্থিত এক ব্রাজিলিয়ান মডেলকে দীপিকা ভেবে ভুল করে এএফপি ও গেটির মতো চিত্রসংবাদ সংস্থা। এমনকি, ফ্যাশন পত্রিকা ‘ভোগ’ও। দীপিকার একটি ছবি নিজেদের পত্রিকার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে তার নীচে লেখা হয়, ছবিটি ওই ব্রাজিলিয়ান মডেলের। যার নাম ক্যামিলা ম্যাককনাফি। এই ভুলের জন্য ভারতীয়রা সিনেমাপ্রেমীরা ওই পত্রিকার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তবে দীপিকার তার অস্কার অবতারের জন্য সেরা প্রশংসাটি পেয়েছেন তার বলিউডের এক সহকর্মীর কাছ থেকে। প্রশংসার বিষয়ে কিছুটা কৃপণ বলে পরিচিত বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত দীপিকার প্রশংসা করে লিখেছেন, অস্কারের মঞ্চে দীপিকাকে খুব সুন্দর দেখতে লেগেছে। দীপিকাকে একসময় মাদকাসক্ত বলে মন্তব্য করেছিলেন কঙ্গনা। তার থেকে পাওয়া এমন প্রশংসাও যে দীপিকার অস্কার সূচনার আরও একটি নতুন ঘটনা— সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। অনেকেই বলছেন হলিউডের বৈগ্রহিক ফ্যাশনকে কিছুটা অনুকরণের চেষ্টা করেছেন দীপিকা। তার বেছে নেয়া পোশাক-গহনা থেকে শুরু করে তার সাজগোজের অনেকটাই হলিউড ক্লাসিক বলে পরিচিত ‘ব্রেকফাস্ট অ্যাট টিফনি’জ’ ছবিতে অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন অনুপ্রাণিত। হাতে দস্তানা, হিরের গয়না, মাথায় হালকা হাতে বাঁধা খোঁপা, হালকা গোলাপি লিপস্টিক, গোলাপি আইশ্যাডো, উইঙ্গড আইলাইনার, গলায় হিরের হার— সবই যেন অড্রের সাজের আধুনিক রূপ। তবে দীপিকার সাজগোজ অস্কারের ফ্যাশন সমালোচকদের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। ভারতীয় সিনেমার প্রতিনিধি হিসেবে দীপিকা যে নজর কেড়েছেন, তার প্রমাণ আন্তর্জাতিক ফ্যাশন পত্রিকাগুলিতে দীপিকার পোশাক চয়ন নিয়ে আলোচনা। সেই সব আলোচনার সারমর্ম হলো, দীপিকার পোশাকে ছিল মার্জিত গ্ল্যামারের ধ্রুপদী প্রদর্শন। সাধারণ পোশাকে বহুবার দেখা গেছে দীপিকাকে। নিয়মিত কান চলচ্চিত্রোৎসবে তার উপস্থিতি নজর টানে ফ্যাশন দুনিয়ার। তবে এমন হলিউডি ঢঙের ক্লাসিক গাউনে তাকে বড় একটা দেখা যায়নি। এর আগে অস্কার পরবর্তী পার্টিতে ২০১৭ সালে হাজির হয়েছিলেন দীপিকা। সেবার বেছে নিয়েছিলেন কাঁধ খোলা পোশাক। কালো এবং ঝলমলে সোনালির মিশেল ছিল তার গাউনে। খোলা অবিন্যস্ত চুলে সেই দীপিকাও ছিলেন গ্ল্যামারগার্ল। তবে ২০২৩ সালে প্রথম অস্কারের মঞ্চে উঠলেন দীপিকা। প্রেজেন্টার হিসেবে। ফ্যাশন দুনিয়ার নজরদাররা বলছেন, এই দীপিকার সাজ পোশাক অনেক বেশি পরিণত।
Discussion about this post