ঢাকা : মহামারী করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে আসছে জুনে দেশে অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সারাদেশের শিক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন নিজেদের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কি না সেই দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার মনিজা রহমান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন স্কুলটির শতাধিক শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও যোগ দেয় এই কর্মসূচিতে। সঙ্গে ছিলেন অভিভাবকরাও। রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি নিশ্চিত হতে না পারায় প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কামরুন্নাহারের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে বিক্ষোভ থেকে। যদিও প্রতিষ্ঠান প্রধানের দাবি, ২০২২ সালে যারা পরীক্ষা দেবে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। এদিকে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তাসহ হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন মোড় ও পল্টন এলাকার রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। শুরুতে একপাশের সড়ক পুরো বন্ধ করে দেয়া হলেও পরে ধীরে ধীরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় এবারের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে তারা। ২০২২ সালে ২৮০ জন ও ২০২৩ সালের ৩০০ জন এসএসসি শিক্ষার্থীর পরীক্ষা অনিশ্চয়তার মুখে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনিজা রহমান গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ২৮০ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ আগে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে, তাদের রেজিস্ট্রেশন এখনো হয়নি। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ লুৎফুন্নাহারকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ একসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে তারা শুনেছেন। মনিজা রহমানের পাশাপাশি তিনি টাঙ্গাইলের একটি কলেজেরও প্রধান। তবে এখনো তিনি দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আছেন কি না, সেটি তাদের জানা নেই। বোর্ড থেকে অধ্যক্ষের পদত্যাগের কথা বলা হলেও তিনি পদত্যাগ করছেন না। বোর্ডও শিক্ষার্থীদের কোনো সহযোগিতা করছে না। শামীমা সুলতানা নামের একজন অভিভাবক ঢাকাটাইমসকে বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ ২০২০সালে এখানে যোগ দেয়ার পর থেকে নানা কারণে শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে চাকরি করেন বলে শুনেছি। যে কারণে তাকে এখান থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু সে সরে না যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের এখন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। আমরা সমাধান চাই। সন্তানরা নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দেবেন সেজন্য কি করতে হয় সরকারকে করতে হবে। স্কুলটির রেজিস্ট্রেশন না পাওয়া এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী নীলিমা জাহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, সামনে এসএসসি পরীক্ষা, আমরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। অথচ এখন জানতে পারি রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। বোর্ডে যোগাযোগ করেছি। তারা বলছে, প্রিন্সিপাল রেজিস্ট্রেশন করেননি। শরিফুল ইসলাম নামের আরেকজন অভিভাবক ঢাকাটাইমসকে বলেন, শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে অধ্যক্ষের সমস্যা। খেসারত দিচ্ছে আমাদের সন্তানরা।এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন না দেওয়া ও নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। স্কুলের শিক্ষকরা বলছেন, প্রিন্সিপাল শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনই করেনি। তিনি শিক্ষকদেরও বেতন আটকে রেখেছেন দু’মাস ধরে। আমরা কিছু বলতেও পারি না। নিয়োগ নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পাশে অবস্থান করা প্রতিষ্ঠানটির একজন সিনিয়র শিক্ষক ঢাকাটাইমসকে বলেন, অধ্যক্ষের সঙ্গে সমস্যার কারণে এই সমস্যার তৈরি হয়েছে। নিয়মিত আমরা বেতন পাচ্ছি না। এর সমাধান দরকার। সমাধান না হলে আমরাও আন্দোলনে যাবো। এদিকে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছেন তখন দুপুরে কয়েকজন অভিভাবকসহ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যান অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার। তার দাবি, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে। তাদের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে ফোন করলে তিনি সঙ্গে থাকা একজন অভিভাবককের সঙ্গে প্রতিবেদককে কথা বলার অনুরোধ করেন। অপরপ্রান্ত থেকে সুদীপ কুমার নামের একজন অভিভাবক ঢাকাটাইমসকে জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা আমাদের জানিয়েছেন ২০২২সালে যারা পরীক্ষা দেবে তাদের কোনো সমস্যা হবে না। তবে পরের বছরে যারা পরীক্ষা দেবে তাদের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কিনা তা তাদের কিছু জানানো হয়নি। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর শামসুজ্জোহাও রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সমস্যার কথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তিনি সাক্ষাতও করেছেন। শিক্ষকদের বেতন বকেয়ার বিষয়টিও জানান এই কাউন্সিলর। এদিকে শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রতিষ্ঠানটির কমিটি ভেঙে দেয়ার পর ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাহনাজ সুলতানা আপাতত সভাপতির দায়িত্বে আছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিষ্পত্তি না হওয়ায় তিনি বেতনের কাগজে স্বাক্ষর করছেন বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
Discussion about this post